ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেক্সিকোর উপর শুল্ক আরোপ এবং সীমান্তে সেনা সমাবেশ : আসল কারণ কি?
সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মেক্সিকোর থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেন, যদিও পরে তিনি কিছু ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত শিথিল করেছেন। একই সঙ্গে, মেক্সিকো সীমান্তে অতিরিক্ত ৩,০০০ সেনা মোতায়েন করে প্রতিরক্ষা বিভাগ। ট্রাম্পের দাবি ছিল, মাদক এবং অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করতেই এই পদক্ষেপ। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, গত এক বছরে মাদক সংশ্লিষ্ট মৃত্যু এবং সীমান্ত অতিক্রমের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
তাহলে, ট্রাম্পের আসল উদ্দেশ্য কি? বিশ্লেষকদের মতে, এর প্রধান দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, ট্রাম্প সম্ভবত তাঁর অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক নীতির বিশৃঙ্খলা থেকে জনগণের মনোযোগ ঘোরাতে চাইছেন। যদিও তিনি “মার্কিন অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার” প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতি ৩ শতাংশে পৌঁছেছে, ভোক্তাদের আস্থা কমেছে, পেট্রোলের দাম বাড়ছে এবং হাজার হাজার ফেডারেল কর্মচারী চাকরি হারিয়েছেন।
দ্বিতীয়ত, এবং সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো – ট্রাম্প “মনরো মতবাদ”-এর একটি নতুন সংস্করণ তৈরি করতে চাইছেন। এর মাধ্যমে তিনি মেক্সিকো এবং বৃহত্তর অর্থে পুরো লাতিন আমেরিকাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তারের অধীনে আনতে চান। “মনরো মতবাদ” মূলত উনিশ শতকের একটি মার্কিন নীতি, যা এই অঞ্চলের উপর ইউরোপীয় প্রভাব বিস্তারের বিরোধিতা করার অজুহাতে মার্কিন আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিল। এই নীতির সুযোগ নিয়েই যুক্তরাষ্ট্র মেক্সিকোর বিশাল ভূখণ্ড দখল করে নেয়।
বর্তমানে, চীন ও রাশিয়ার মতো দেশগুলো যখন বিশ্ব মঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে, তখন ট্রাম্প সম্ভবত এই অঞ্চলে তাদের প্রভাব কমাতে চাইছেন। মেক্সিকো এক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ৩,০০০ কিলোমিটার সীমান্ত ভাগ করে এবং লাতিন আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এটি। তাছাড়া, চীনের সঙ্গে মেক্সিকোর বাণিজ্যিক সম্পর্কও বেশ শক্তিশালী, যা যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের কারণ। এমনকি, মেক্সিকোর পক্ষ থেকে ব্রিকস জোটে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছিল বলেও জানা যায়।
মেক্সিকোর বর্তমান প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবাম প্রাদো, যিনি একজন বামপন্থী নেতা এবং জনগণের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়, ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করতে এবং শুল্ক এড়াতে মাদক বিরোধী অভিযানে গতি এনেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় মাদক কারবারিকে হস্তান্তর করেছেন এবং মাদক পাচার ও আটকের সংখ্যাও রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি করেছেন।
তবে, ট্রাম্পের মূল উদ্দেশ্য মাদক পাচার বা অভিবাসন সমস্যা সমাধান করা নয়। তিনি সীমান্তে সেনা সমাবেশের মাধ্যমে মেক্সিকোর উপর চাপ সৃষ্টি করতে এবং চীনকে মেক্সিকোতে তার প্রভাব বিস্তার করতে বাধা দিতে চাইছেন। এখন দেখার বিষয়, শেইনবাম এই চাপ কিভাবে মোকাবেলা করেন। ট্রাম্প সম্ভবত মাদক ও অভিবাসনের অজুহাত ব্যবহার করে মেক্সিকোর উপর তাঁর “মনরো মতবাদ”-এর নতুন সংস্করণ চাপিয়ে দিতে চাইছেন, যা পুরো পশ্চিমা গোলার্ধের জন্য একটি উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা