মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বর্তমানে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও খারাপ করেছেন।
সীমান্ত নীতি নিয়ে মতবিরোধের জেরে তিনি কানাডার পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করেছেন, যা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
জানা গেছে, ট্রাম্প তার সামাজিক মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া এক পোস্টে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার ফোনালাপের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, কানাডা সরকার মাদক চোরাচালান, বিশেষ করে ফেন্টানাইল পাচার রোধে যথেষ্ট ব্যবস্থা নেয়নি।
যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কানাডা সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানাইলের অনুপ্রবেশ উদ্বেগের বিষয় হলেও, এর পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম।
ট্রাম্প একইসঙ্গে কানাডার আসন্ন ফেডারেল নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন, যা ট্রুডোর সরকারের বৈধতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করতে পারে।
এই বাণিজ্য যুদ্ধের সূত্রপাত হয় যখন ট্রাম্প ২৫ শতাংশ হারে কানাডা এবং মেক্সিকোর পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেন।
এর প্রতিক্রিয়ায় কানাডা ও মেক্সিকোও পাল্টা শুল্ক আরোপ করে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, “কানাডীয়রা যুক্তিবাদী এবং ভদ্র, তবে দেশের স্বার্থের প্রশ্নে আমরা কোনো আপস করব না।”
তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, এই বাণিজ্য যুদ্ধ উভয় দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
কানাডার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এই শুল্কের বিরুদ্ধে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (World Trade Organization) অভিযোগ দায়ের করেছে।
তাদের বক্তব্য, শুল্ক আরোপের এই সিদ্ধান্ত ‘যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা চুক্তি’ (USMCA)-এর পরিপন্থী।
কানাডার অর্থমন্ত্রী ডমিনিক লেব্লাঙ্ক জানিয়েছেন, তারা এই শুল্ক সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করার জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমরা চাই, যুক্তরাষ্ট্র যেন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিকে সম্মান জানায়।”
অন্যদিকে, ট্রাম্প ফেন্টানাইল চোরাচালানের অভিযোগকে সামনে এনে কানাডার ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন।
তার দাবি, কানাডা সীমান্ত দিয়ে আসা ফেন্টানাইলের কারণে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
তবে, সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কানাডা সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসা ফেন্টানাইলের পরিমাণ খুবই সামান্য।
উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাঞ্চলে ১৯.৫ কিলোগ্রাম ফেন্টানাইল জব্দ করা হয়েছে, যেখানে একই সময়ে দেশটির অভ্যন্তরে আসা মোট ফেন্টানাইলের পরিমাণ ছিল ৯,৯৩৪ কিলোগ্রামের বেশি।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ সম্ভবত বাণিজ্য চুক্তির শর্তাবলী পরিবর্তন এবং কানাডার সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করার একটি কৌশল।
ট্রাম্প এর আগেও বিভিন্ন বিশ্বনেতার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
এমনকি তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ড সম্প্রসারণের ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন।
কানাডার রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে, জাস্টিন ট্রুডো আগামী ৯ই মার্চ লিবারেল পার্টির নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়াবেন।
এরপর দল নতুন নেতা নির্বাচন করবে।
কানাডায় আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে ফেডারেল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
তবে, লিবারেল পার্টি চাইলে এর আগে নির্বাচন দিতে পারে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী।