দি গ্রেট গ্যাটসবি-র শতবর্ষ: নিউইয়র্কের ‘জ্যাজ যুগ’ উদযাপন
নিউ ইয়র্কের আকাশে যেন এক ঝলমলে অতীত! বিখ্যাত উপন্যাস “দি গ্রেট গ্যাটসবি”-র (The Great Gatsby) প্রকাশনার একশো বছর পূর্তি উপলক্ষে সেজে উঠেছে শহরটি। এই উপন্যাসের প্রেক্ষাপট, জ্যাজ যুগের উন্মাদনা, বিলাসিতা আর স্বপ্নভঙ্গের এক মিশ্রণ যেন আজও নিউ ইয়র্কের আনাচে-কানাচে লেগে আছে। বিশ শতকের বিশের দশকে (the Roaring Twenties) আমেরিকার সমাজ ও সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল চিত্র ফুটিয়ে তুলেছিলেন এফ স্কট ফিটজেরাল্ড।
গল্পের শুরুটা হয় হারলেমের মিন্টন’স প্লেহাউজে, যেখানে জ্যাজ ব্রঞ্চের আসর বসেছিল। পুরনো দিনের স্মৃতি নিয়ে আজও সেখানে বাদ্যযন্ত্রের সুরের সাথে চলে পানশালা। এই ক্লাবের দেওয়ালে টাঙানো আছে বিলি হলিডে ও ডি “জিজি” গিলেস্পির মতো কিংবদন্তি জ্যাজ শিল্পীদের ছবি। যেন এক টুকরো অতীতে পা রাখা।
এই জ্যাজ যুগকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে কাজ করে যাচ্ছেন সঙ্গীতশিল্পী মাইকেল আরেনেল্লা। তিনি বলেন, “এই স্থানটি হারলেম রেনেসাঁর শেষ স্মৃতিচিহ্ন।” ১৯২০ থেকে ১৯৩০-এর দশকে আফ্রিকান-আমেরিকান সাহিত্য, ফ্যাশন এবং সঙ্গীতের, বিশেষ করে জ্যাজের এক দারুণ বিকাশ ঘটেছিল এই শহরে।
গ্যাটসবি উপন্যাসের প্রেক্ষাপট ছিল নিউ ইয়র্ক রাজ্য। এখানে শহরের গোপন জীবন এবং লং আইল্যান্ডের ঐশ্বর্যপূর্ণ জগৎ—উভয়ই লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন। গল্পে অবৈধ মদের ব্যবসা, যা প্রোhibition নামে পরিচিত, সেই সময়ের আড়ালে থাকা আড়ম্বরপূর্ণ পার্টিগুলো জ্যাজ সঙ্গীতের সাথে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।
ঐতিহাসিক কেভিন ড্র্যাপারের মতে, “গ্যাটসবির যুগ ছিল শতাব্দীর অন্যতম সেরা উৎসবের সময়, যখন মদ নিষিদ্ধ ছিল।” তিনি নিউ ইয়র্কের একটি পুরনো স্পিকইজি, ২১ ক্লাবে নিয়ে যান, যা একসময় শহরের সবচেয়ে কুখ্যাত স্থান ছিল। গোপন দরজা, লুকানো ওয়াইন সেলারের মতো ব্যবস্থা ছিল এখানে।
১৯২০-এর দশকে আমেরিকায় এক নতুন আত্মপরিচয়ের উন্মেষ ঘটেছিল। ইউরোপের দিকে তাকানোর পরিবর্তে বিশ্ব তখন আমেরিকার দিকে তাকাতে শুরু করে। নিউ ইয়র্ক ছিল সেই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দু। হোটেল এডিসন-এর আর্ট ডেকো নকশা, লবিতে জ্যাজ যুগের ছবিগুলো যেন সেই সময়ের প্রতিচ্ছবি।
গল্পের আরেক আকর্ষণ ছিল প্লাজা হোটেল। ফিটজেরাল্ডের মতে, “প্লাজাতে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেনি।” এই হোটেলে গ্যাটসবি, ডেইজি, টম বুচানান এবং আরও অনেকে মিলেছিলেন। বর্তমানে, এখানে একটি ১৯২০-এর দশকের থিমযুক্ত স্যুট তৈরি করা হয়েছে, যা গ্যাটসবির সেই সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়।
উপন্যাসটির অনেক ঘটনা লং আইল্যান্ডে ঘটেছিল। গ্যাটসবির বিশাল প্রাসাদে প্রায়ই জমকালো পার্টি হতো। পরিচালক বাজ Luhrmann-ও এই অঞ্চলের বাড়িগুলো ঘুরে তাঁর সিনেমার জন্য গবেষণা করেছিলেন।
গ্যাটসবির প্রাসাদ তৈরির অনুপ্রেরণা ছিল ওহেকা ক্যাসেল। এক সময়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যক্তিগত বাসভবন ছিল এটি। এখন এটি একটি হোটেল, যেখানে প্রায়ই বিবাহ অনুষ্ঠান হয়। এই প্রাসাদে গ্যাটসবির জীবনযাত্রা, মার্বেলের বাথটাব, বাগান—সবকিছুই যেন স্বপ্নীল এক জগৎ তৈরি করে।
গ্যাটসবির এই শতবর্ষ উদযাপনের মাধ্যমে নিউ ইয়র্ক যেন তার সোনালী অতীতকে আবারও স্মরণ করছে। জ্যাজ ক্লাব, আর্ট ডেকো হোটেল, লং আইল্যান্ডের প্রাসাদ—সবকিছুই যেন সেই সময়ের সাক্ষী।
তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক