1. [email protected] : adminb :
  2. [email protected] : Babu : Nurul Huda Babu
March 14, 2025 8:52 PM

ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে বন্ধ দুর্ভিক্ষ দেখার যন্ত্র! বাড়ছে খাদ্য সংকট?

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট হয়েছে : Sunday, March 9, 2025,

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক পরিচালিত একটি জরুরি ব্যবস্থা, যা বিশ্বে দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাস দিত, সেটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের বৈদেশিক সাহায্য কমানোর সিদ্ধান্তের ফলস্বরূপ এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

ফেমিন আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেমস নেটওয়ার্ক (FEWS NET) নামক এই ব্যবস্থাটি খরা, শস্য উৎপাদন এবং খাদ্যের দাম সহ বিভিন্ন সূচক পর্যবেক্ষণ করে থাকে। এর মাধ্যমে ৩০টিরও বেশি দেশে খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ার আগেই পূর্বাভাস দেওয়া হতো। এই নেটওয়ার্ক সুদানে, দক্ষিণ সুদান, সোমালিয়া, ইয়েমেন, ইথিওপিয়া, আফগানিস্তানসহ আরও অনেক দেশে খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক তথ্য সরবরাহ করত। কিন্তু বর্তমানে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (USAID)-কে দুর্বল করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এর কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

একসময় USAID-এর অর্থায়নে পরিচালিত এই প্রকল্পের প্রধান ছিলেন তানিয়া বুদ্রো। তিনি জানান, “বিশ্বজুড়ে খাদ্য নিরাপত্তা সংকটে থাকা দেশগুলোতেই এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি।” সাহায্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে, FEWS NET-এর ওয়াশিংটন ডিসি এবং মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মীদের বেতন দেওয়া যাচ্ছে না। এমনকি, এর ওয়েবসাইটও বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক বিশ্লেষণের জন্য গবেষকদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের ভান্ডারটিও এখন ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, FEWS NET ছিল এই খাতের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা। খাদ্য সংকট যেহেতু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়, তাই দ্রুত পদক্ষেপ নিলে জীবন বাঁচানো এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব হয়। বুদ্রো বলেন, “খারাপ পরিস্থিতি এড়াতে হলে, আগে থেকেই পরিকল্পনা করতে হবে। দেরিতে হস্তক্ষেপ করলে পরিস্থিতি মোকাবিলায় অনেক বেশি খরচ হয়, যা মার্কিন সরকার বা অন্যান্য সংস্থার জন্য যেমন ব্যয়বহুল, তেমনিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জীবন ধারণের ক্ষেত্রেও ক্ষতির কারণ হয়।”

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক রুবিও, যিনি বর্তমানে USAID-এর ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তিনি জীবন রক্ষাকারী কর্মসূচিগুলোর জন্য একটি সাধারণ ছাড় দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। তবে, USAID-এর একাধিক কর্মী এবং ঠিকাদার সিএনএনকে জানিয়েছেন, USAID-এর প্রায় সব মানবিক সহায়তা কার্যক্রমই বর্তমানে স্থগিত রয়েছে। কারণ, অর্থ পরিশোধ করা যাচ্ছে না এবং চুক্তিগুলো দেখাশোনার জন্য ওয়াশিংটনে কোনো কর্মী নেই।

সিএনএন কর্তৃক প্রাপ্ত তালিকা অনুযায়ী, এর মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, কলম্বিয়া, সুদান এবং কঙ্গোর গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের মতো দেশগুলোতে খাদ্য সহায়তা প্রদান বন্ধ হয়ে যাওয়া। তালিকাটিতে আরও দেখা যায়, মিয়ানমারে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের জন্য পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার সরবরাহ বন্ধ করতে হয়েছে দাতব্য সংস্থাগুলোকে। এছাড়া, ইথিওপিয়ায় খাদ্য সরবরাহ আটকে গেছে, যা গুদামে নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ড্যানিয়েল ম্যাক্সওয়েল সিএনএনকে বলেছেন, FEWS NET বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খাদ্য সহায়তার ওপর সরাসরি প্রভাব না পড়লেও, ভবিষ্যতে এর গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে। তিনি আরও বলেন, “খাদ্য সহায়তা যদি চলতেই থাকে, কিন্তু FEWS NET না থাকে, তবে কোথায় এই সহায়তা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তা নির্ধারণ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব কোনো ভালো ব্যবস্থা থাকবে না।”

টুফটস ইউনিভার্সিটির খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক অধ্যাপক এবং ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (IPC) সিস্টেমের ফেমিন রিভিউ কমিটির সদস্য ম্যাক্সওয়েল বলেন, FEWS NET শুধু মার্কিন সরকারের জন্যই নয়, বরং মানবিক সহায়তা প্রদানকারী অন্যান্য সংস্থাগুলোর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

১৯৮৪ সালের ইথিওপিয়ার দুর্ভিক্ষে প্রায় ৪ থেকে ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এই ঘটনার পর, খাদ্য সংকট মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান একটি ব্যবস্থা তৈরি করার নির্দেশ দেন। সেই ঘটনার ফলস্বরূপ FEWS NET গঠিত হয়েছিল। কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ প্রকৌশলের অধ্যাপক ইভান থমাস বলেন, এই ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অন্যান্য দেশগুলোও তাদের জনগণের জন্য খাদ্য সহায়তা দিতে পারবে না।

কেনিয়ার বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খাদ্য নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় FEWS NET থেকে পাওয়া তথ্যের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী গবেষণা অধ্যাপক ডেনিস মুথিকে বলেন, “ডেটা সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের মডেলগুলোতে সমস্যা হবে, যা জল ব্যবহারের সঠিক পূর্বাভাস দিতে বাধা দেবে। এর ফলে দুর্ভিক্ষ এবং মারাত্মক বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।”

তথ্য সূত্র: সিএনএন

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
© All rights reserved © 2019 News 52 Bangla
Theme Customized BY RASHA IT