মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত এক শিক্ষার্থীর গ্রেপ্তার এবং তাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করার সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। মাহমুদ খলিল নামের ওই শিক্ষার্থীর আইনজীবী জানিয়েছেন, তার মক্কেলকে গ্রেপ্তারের সময় সন্ত্রাসীর মতো আচরণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত শনিবার রাতে নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খলিলকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তার আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। আইনজীবীর দাবি, গ্রেপ্তারের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের পরিচয় পর্যন্ত দেননি। এরপর তাকে লুইজিয়ানার একটি ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তাকে একটি বাঙ্কারে রাখা হয় এবং কোনো বালিশ বা কম্বল দেওয়া হয়নি।
মাহমুদ খলিলের আইনজীবীরা বলছেন, তাদের মক্কেল গত বছর গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তারা মনে করেন, এই কারণে তাকে এখন টার্গেট করা হচ্ছে। খলিলের আইনজীবীরা আরও বলছেন, তাকে আটকের কারণ হিসেবে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে তারা বলছেন, খলিলের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ নেই।
মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মাহমুদ খলিলের হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। হামাস একটি ইসলামপন্থী সংগঠন, যারা গাজা নিয়ন্ত্রণ করে এবং যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত। সরকার একটি বিতর্কিত আইনের আশ্রয় নিয়ে খলিলকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করছে।
এ বিষয়ে আইনজীবীরা বলেছেন, “সরকার মাহমুদ খলিলের মৌলিক অধিকার খর্ব করছে। তিনি কেবল তার মতামত প্রকাশ করেছেন, যে কারণে তাকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।” তারা আরও যোগ করেন, “সরকারের এই পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের, শিক্ষক এবং সাধারণ মানুষের বাকস্বাধীনতাকে ভয় দেখাচ্ছে।”
এদিকে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গ্রেপ্তারের পক্ষে কথা বলেছেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের আরো গ্রেপ্তারের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেছেন, “যারা সন্ত্রাসী এবং ইসরায়েল বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত, তাদের বিতাড়িত করা হবে।”
খলিলের আইনজীবীরা আদালতে জানিয়েছেন, তাদের মক্কেলকে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া ছিল অনেকটা অপহরণের মতো। তারা দ্রুত খলিলের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। খলিল বর্তমানে লুইজিয়ানার একটি ডিটেনশন সেন্টারে বন্দী রয়েছেন। আগামীতে তার মামলার শুনানি লুইজিয়ানায় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে আদালত কর্তৃপক্ষের মনোভাব তুলনামূলকভাবে রক্ষণশীল।
মাহমুদ খলিল যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ডধারী এবং এর আগে তিনি ব্রিটিশ সরকারের হয়েও কাজ করেছেন। তার স্ত্রী আসন্ন সন্তানের জন্ম নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং তিনিও সন্তানের জন্মের সময় পাশে থাকতে চান।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান