মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ফিলিস্তিনের একজন অধিকারকর্মী মাহমুদ খলিলকে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তাঁর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে—এমন অভিযোগ আনা হয়েছে, যে কারণে তাঁর গ্রিন কার্ড বাতিল করা হয়েছে।
এই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
মাহমুদ খলিল কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন।
তিনি ফিলিস্তিন-গাজা যুদ্ধ নিয়ে হওয়া বিক্ষোভে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা এবং একজন মার্কিন নাগরিককে বিয়ে করেছেন।
তাঁর স্ত্রী আগামী মাসে সন্তানের জন্ম দিতে যাচ্ছেন।
জানা গেছে, গত শনিবার নিউইয়র্ক শহরে খলিল ও তাঁর স্ত্রী রাতের খাবার খেয়ে ফেরার সময়, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE) বিভাগের একজন কর্মকর্তা তাঁদের ভবনে প্রবেশ করেন এবং নিজেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে খলিলকে তাঁর সঙ্গে যেতে বলেন।
কর্মকর্তাদের দাবি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তাঁর স্টুডেন্ট ভিসা বাতিল করা হয়েছে।
যদিও খলিলের আইনজীবী জানান, তাঁর কাছে গ্রিন কার্ড রয়েছে।
কিন্তু কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সেটিও বাতিল করা হয়েছে।
এরপর খলিলকে হাতকড়া পরিয়ে একটি সাদা গাড়িতে করে প্রথমে নিউ জার্সি এবং পরে লুইজিয়ানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আইন অনুযায়ী, সাধারণত গ্রিন কার্ডধারীদের কোনো অপরাধের প্রমাণ পাওয়া না গেলে তাদের দেশ থেকে বের করে দেওয়া যায় না।
কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন এখানে একটি বিরল আইনের আশ্রয় নিয়েছে।
তাদের অভিযোগ, খলিলের যুক্তরাষ্ট্রে উপস্থিতি এবং কার্যক্রমের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির ক্ষতি হতে পারে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাষ্যমতে, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েল-বিরোধী কার্যকলাপ দমনে যুক্তরাষ্ট্রের যে নীতি রয়েছে, খলিলের কারণে তাতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে পারে।
মাহমুদ খলিলের আটকের ঘটনায় অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁদের মতে, এর মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতার মতো মৌলিক অধিকারকে খর্ব করা হচ্ছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ভিন্নমতের কারণে কাউকে শাস্তি দেওয়ার এমন প্রচেষ্টা গ্রহণযোগ্য নয়।
খলিলের আটকের পর সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বক্তব্যে জানান, ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অংশ হিসেবেই এই গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও অনেককে গ্রেপ্তার করা হবে।
খলিলের আইনজীবীরা তাঁর মুক্তির জন্য আইনি লড়াই শুরু করেছেন।
তাঁরা তাঁর আটকের কারণ হিসেবে আনা অভিযোগের বিরোধিতা করছেন।
তাঁরা যুক্তি দেখাচ্ছেন যে, খলিলকে তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী অনুযায়ী মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন।
বর্তমানে খলিল লুইজিয়ানার একটি ডিটেনশন সেন্টারে বন্দী আছেন।
তাঁর আইনজীবীরা তাঁকে দ্রুত নিউইয়র্কে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন।
একইসঙ্গে তাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোও খণ্ডন করার চেষ্টা করছেন।
এই ঘটনার আইনি প্রক্রিয়া এখনো চলমান।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান