কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রায় এক দশক দায়িত্ব পালন করার পর সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন জাস্টিন ট্রুডো। তার এই বিদায় শুধু একটি পদের সমাপ্তি নয়, বরং তার ‘সানি ওয়েজ’ বা ‘উজ্জ্বল পথ’-এর শাসনেরও অবসান।
২০১৫ সালে ক্ষমতায় আসার সময় ট্রুডোর মূল মন্ত্র ছিল এই ‘সানি ওয়েজ’। তবে তার শাসনকালে বিভিন্ন সময়ে সেই পথ কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছে।
জাস্টিন ট্রুডোর সময়ে কানাডার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বেশ কয়েকবার উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে বাণিজ্য নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। ট্রাম্প যখন শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন, তখন ট্রুডো এর বিরোধিতা করে দৃঢ়ভাবে কানাডার স্বার্থ রক্ষা করেন। এছাড়াও, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের মতো বিষয়গুলোতেও ট্রুডোর সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।
তবে ট্রুডোর শাসনামলে বিতর্কও কম হয়নি। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল এসএনসি-লাভালিন বিষয়ক কেলেঙ্কারি। এছাড়া, অতীতে তার ‘ব্ল্যাকফেস’-এর ছবি প্রকাশ পাওয়ার পর তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এমনকি তার পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত একটি চ্যারিটিকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেওয়ার অভিযোগও উঠেছিল, যদিও এ বিষয়ে হওয়া তদন্তে ট্রুডোর সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ট্রুডোর সময়ে কানাডার অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য কিছু পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে, শিশুদের জন্য সরাসরি কর সুবিধা প্রদান এবং সরকারি ভর্তুকিতে শিশু যত্ন পরিষেবা চালু করার মতো পদক্ষেপগুলো বেশ প্রশংসিত হয়েছে। এছাড়া আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং তাদের অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
বিদায় ভাষণে ট্রুডো দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এগুলো কোনোভাবেই “স্বাভাবিক বিষয় নয়” এবং এর জন্য সবসময় প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়।
জাস্টিন ট্রুডোর বিদায় নেওয়ার পর কানাডার রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার উত্তরসূরি হিসেবে কে দায়িত্ব নিবেন, সেদিকে তাকিয়ে আছে সবাই।
তথ্যসূত্র: সিএনএন