রাজনৈতিক উত্তেজনার ছায়ায় কানাডার হকি জয়: খেলোয়াড় ও দর্শকদের মধ্যে উত্তেজনা
ফেব্রুয়ারী মাসে অনুষ্ঠিত হওয়া ‘৪ নেশনস ফেস-অফ’ হকি টুর্নামেন্ট ছিলো কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ের এক বিরল মঞ্চ। কিন্তু মাঠের লড়াই ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে রাজনৈতিক পরিস্থিতি। দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্ক যখন উত্তেজনায় ভরপুর, তখন এই টুর্নামেন্ট যেন এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। কানাডার কোচ জন কুপার এই ঘটনাকে ‘সৃষ্ট এক বিরল পরিস্থিতি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
ঐতিহ্যগতভাবে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সুসম্পর্ক বিদ্যমান। কিন্তু সেই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু বিতর্কিত মন্তব্য এবং বাণিজ্য শুল্কের ঘোষণা দুই দেশের সম্পর্কে ফাটল ধরায়। ট্রাম্প কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে ‘৫০তম রাজ্যের গভর্নর’ বলে মন্তব্য করেন, যা ছিল কূটনৈতিক শিষ্টাচারের লঙ্ঘন। এর ফলস্বরূপ, টুর্নামেন্টের আগে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সংগীতের সময় কানাডার দর্শকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
কানাডার কোচ জন কুপার মনে করেন, খেলোয়াড়দের জন্য এই পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ নতুন। মাঠের খেলায় সেরাটা দেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের রাজনৈতিক অস্থিরতাও মোকাবেলা করতে হয়েছে। কুপার বলেন, “আমি ‘পারফেক্ট স্টর্ম’ শব্দটি ব্যবহার করতে চাই না, তবে সবকিছু যেন একসঙ্গে এসে মিলেছিল।
খেলোয়াড়দের উপর বাড়তি চাপ কমাতে তিনি সচেষ্ট ছিলেন, তবে তাঁদের অনুভূতি তিনি বুঝতে পারতেন।
খেলা চলাকালীন সময়ে মাঠের পরিবেশ ছিল উত্তেজনায় ভরপুর। খেলার শুরুতেই খেলোয়াড়দের মধ্যে মারামারি দেখা যায়। জন কুপার এই পরিস্থিতিকে ‘বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী’র সঙ্গে হঠাৎ করে তৈরি হওয়া কিছু জটিলতা হিসেবে উল্লেখ করেন। খেলায় যুক্তরাষ্ট্র জয়লাভ করলেও, ফাইনাল ম্যাচে কানাডা জয়ী হয়।
কানাডার হয়ে গুরুত্বপূর্ণ গোল করেন কনর ম্যাকডেভিড। এই জয় শুধু একটি খেলায় জয় ছিল না, বরং এটি ছিল কানাডার মানুষের জাতীয় গৌরবের প্রতীক। কুপার বলেন, “খেলাটি যেভাবে শুরু হয়েছিল, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, জাতীয় গর্ব এবং দেশের জন্য জয়—সবকিছু মিলিয়ে হকি যেন জয়লাভ করেছে।
বর্তমানে জন কুপার তাঁর দল ট্যাম্পা বে লাইটনিংকে নিয়ে ব্যস্ত। তিনি চান তাঁর দল আবারও স্ট্যানলি কাপ জিতুক। তিনি মনে করেন, খেলোয়াড়দের মনোবল বাড়ানোর ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে এড়িয়ে যাওয়া কঠিন ছিল। তিনি বলেন, “দর্শকরা তাঁদের টিকিটের মূল্য পরিশোধ করেছেন, এবং তাঁদের অনুভূতি প্রকাশের অধিকার আছে। তাঁরা খেলার বিরুদ্ধে নন, বরং কিছু বিতর্কিত নীতির প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন।
এই ঘটনার কয়েক মাস পর, ট্রাম্প কানাডার পণ্য আমদানির উপর শুল্ক আরোপ করেন। এর জবাবে কানাডা পাল্টা ব্যবস্থা নেয়। প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এই পদক্ষেপকে ‘কানাডার অর্থনীতি ধ্বংসের চেষ্টা’ হিসেবে অভিহিত করেন।
আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো যৌথভাবে ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজন করতে যাচ্ছে। এই টুর্নামেন্টেও যদি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও খারাপ হয়, তবে তার প্রভাব পড়তে পারে।
জন কুপার আশা করেন, শীঘ্রই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। তিনি বিশ্বাস করেন, “সবকিছু একসময় ঠিক হয়ে যাবে এবং সম্পর্ক আবারও আগের মতো হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন