**সুইস আল্পসের কোলে: অত্যাধুনিক সুবিধা ও মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের এক লীলাভূমি**
সুইজারল্যান্ডের আল্পস পর্বতমালা, যা সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি হিসাবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত, সেখানে অবস্থিত একটি অত্যাশ্চর্য হোটেল হলো কেম্পিনস্কি প্যালেস এঙ্গেলবার্গ। যারা প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ও বিলাসবহুল জীবনযাপনের স্বাদ একসঙ্গে উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য এই হোটেলটি একটি আদর্শ স্থান। এটি শুধু একটি হোটেল নয়, বরং প্রকৃতির মাঝে লুকানো এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
এঙ্গেলবার্গ উপত্যকার শান্ত পরিবেশে অবস্থিত এই পাঁচ-তারা হোটেলটি তার অতিথিদের জন্য নিয়ে আসে শ্বাসরুদ্ধকর সব দৃশ্য। হোটেলের প্রতিটি কক্ষ থেকেই দেখা যায় তিতলিসের চূড়া এবং হানে, ভিসবার্গ পর্বতমালার মনোরম দৃশ্য। শীতকালে বরফের চাদরে মোড়া সুইস কুটিরগুলি যেন ছবির মতো সুন্দর হয়ে ওঠে। এখানকার গন্ডোলাগুলি (কেবল কার) নিয়মিতভাবে পাহাড়ের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলাচল করে, যা এই স্থানের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তোলে।
১৯০৫ সালে গ্রান্ডহোটেল উইন্টারহাউস নামে যাত্রা শুরু করে, পরবর্তীকালে হোটেল ইউরোপীয়ার হফ নামে পরিচিতি লাভ করে। এরপর, কেম্পিনস্কি গ্রুপের তত্ত্বাবধানে পাঁচ বছর ধরে সংস্কারের পর, ২০২১ সালের জুনে এটি পুনরায় কেম্পিনস্কি প্যালেস এঙ্গেলবার্গ নামে আত্মপ্রকাশ করে। হোটেলটি তৈরি হয়েছে এক বিশেষ স্থাপত্যশৈলীতে, যা ভিক্টোরিয়ান, গথিক এবং আর্ট নুভোর মিশ্রণ।
হোটেলের প্রধান আকর্ষণগুলো হলো এর অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। প্রতিটি কক্ষে রয়েছে আরামদায়ক বিছানা, কাঠের তৈরি ডেস্ক এবং কাঠের মেঝে। আমাদের দেশের মানুষের রুচি ও চাহিদার কথা মাথায় রেখে, প্রতিটি রুমের ডিজাইন করা হয়েছে, যা পাহাড়ের তাজা অনুভূতি এনে দেয়। বাথরুমগুলিও বিশেষভাবে সজ্জিত, যেখানে আলাদা বাথটাব ও শাওয়ারের ব্যবস্থা রয়েছে।
খাবার ও পানীয়ের ক্ষেত্রেও কেম্পিনস্কি প্যালেস এঙ্গেলবার্গ তার অতিথিদের জন্য নিয়ে আসে ভিন্নতা। এখানকার ক্যাত্তানি রেস্তোরাঁটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। রেস্তোরাঁর প্রধান আকর্ষণ হল হাতে তৈরি ক্রিস্টালের ঝাড়বাতি, যা মাউন্ট তিতলিসের (Mount Titlis) প্রতিরূপ। এখানে পরিবেশিত প্রাতরাশে সুইস খাবারের স্বাদ পাওয়া যায়। এছাড়াও, বিকেলে পরিবেশিত “বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট” থিমের (ডিজনি সিনেমা “বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট” এর থিম) চা-এর আয়োজন বেশ জনপ্রিয়।
হোটেলের আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম হল ‘প্যালেস বার’। দিনের বেলা এটি বই পড়ার জন্য একটি শান্ত স্থান, আর রাতে ককটেল ও সুইস জিন উপভোগ করার আদর্শ জায়গা। পাশেই রয়েছে হাবানোস সিগার লাউঞ্জ, যেখানে বসে পছন্দের পানীয়ের সাথে সিগার উপভোগ করা যেতে পারে।
এই হোটেলের প্রধান আকর্ষণগুলোর মধ্যে একটি হল এর স্পা (spa)। যেখানে রয়েছে ২৪ ঘণ্টার জিম, একটি ইনফিনিটি পুল, এবং বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যকর সেশন। ফিনিশ, বায়ো, এবং ঐতিহ্যবাহী স্টিম বাথ-এর মতো বিভিন্ন ধরনের সেশন এখানে উপভোগ করা যায়। এছাড়াও, এখানে বিভিন্ন ধরনের ম্যাসাজ এবং চিকিৎসারও ব্যবস্থা রয়েছে।
পরিবার-বান্ধব এই হোটেলে ছোটদের জন্য রয়েছে কিডস ক্লাব, যেখানে তারা বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজ করতে ও গান গাইতে পারে।
এঙ্গেলবার্গ শহরটি ভ্রমণকারীদের জন্য খুবই সুবিধাজনক। জুরিখ থেকে গাড়ি অথবা ট্রেন যোগে এখানে পৌঁছানো যায়। এছাড়াও, এখানকার তিতলিস উপত্যকা স্টেশন থেকে গ্লেসিয়ার (হিমবাহ) দেখার জন্য কেবল কার-এ চড়া যায়। শীতকালে স্কিইং (skiing) এবং গ্রীষ্মকালে হাইকিং (hiking) এর মতো কার্যকলাপ এখানে খুবই জনপ্রিয়।
কেম্পিনস্কি প্যালেস এঙ্গেলবার্গে থাকার খরচ: সাধারণত, এখানে প্রতি রাতের জন্য প্রায় ৬৫০ সুইস ফ্রাঙ্ক (প্রায় ৭৯,০০০ বাংলাদেশী টাকা) খরচ হতে পারে।
যারা সুইস আল্পসের মনোমুগ্ধকর পরিবেশে বিলাসবহুল একটি অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য কেম্পিনস্কি প্যালেস এঙ্গেলবার্গ একটি আদর্শ গন্তব্য হতে পারে।
তথ্য সূত্র: Travel and Leisure