মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মেক্সিকো ও কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত ‘স্থগিত’ করলেও, তা ব্যবসায়ীদের জন্য এক জটিল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এই স্থগিতাদেশের শর্ত অনুযায়ী, শুল্ক মওকুফ পেতে হলে পণ্যগুলোকে অবশ্যই ইউএসএমসিএ (USMCA) বাণিজ্য চুক্তির শর্ত পূরণ করতে হবে।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, মেক্সিকো থেকে আসা পণ্যের মাত্র ৫০ শতাংশ এবং কানাডা থেকে আসা ৩৮ শতাংশ পণ্য ইউএসএমসিএ-এর শর্ত মেনে চলে। ফলে, এই চুক্তির আওতায় না আসা পণ্যগুলোর ওপর এখনও ২৫ শতাংশ বা তার বেশি শুল্ক বহাল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। তাদের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, কোন পণ্যের ওপর কী পরিমাণ শুল্ক প্রযোজ্য হবে, তা নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এপ্রিল মাসের ২ তারিখ থেকে ট্রাম্পের এই নতুন নীতি কার্যকর হওয়ার কথা, তবে এর আগে ব্যবসায়ীদের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় খুবই কম।
এই শুল্ক নীতির কারণে অনেক পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে, যার প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব বাজারে। বাণিজ্য বিশ্লেষকদের মতে, ইউএসএমসিএ-এর শর্ত পূরণ করা সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। এর মধ্যে রয়েছে পণ্যের উৎপাদনে ব্যবহৃত উপাদানের উৎস এবং শ্রমিকের মজুরিসহ বিভিন্ন বিষয় নিশ্চিত করা। অনেক ব্যবসায়ী আগে এসব শর্ত পূরণ করতেন না, কারণ তাদের পণ্যের ওপর কোনো শুল্ক ছিল না। কিন্তু এখন ২৫ শতাংশ শুল্কের কারণে তাদের জন্য বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই জটিলতা শুধু ব্যবসায়ীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। সরকারি কর্মকর্তাদেরও বিষয়টি বুঝতে বেগ পেতে হচ্ছে। কারণ বিভিন্ন পণ্যের শুল্ক নির্ধারণে জটিলতা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, পোশাক তৈরির জন্য কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আসা টেক্সটাইল পণ্যের ক্ষেত্রে, ইউএসএমসিএ-এর আওতায় শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে হলে, সেগুলোর সেলাইয়ের সুতা, পকেটের কাপড়, সরু ইলাস্টিক ব্যান্ড এবং বিশেষ কাপড় উত্তর আমেরিকায় তৈরি হতে হবে।
এমন পরিস্থিতিতে, ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হতে পারেন। কারণ, ইউএসএমসিএ-এর শর্ত পূরণ করতে না পারলে তাদের অতিরিক্ত শুল্ক দিতে হবে। যদিও শুল্ক আরোপের কারণে ব্যবসায়ীরা এখন চুক্তি মেনে চলতে আরও বেশি আগ্রহী হবেন, তবে এই অল্প সময়ে কতজন প্রস্তুত হতে পারবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের নীতি বিশ্ব বাণিজ্যকে আরও কঠিন করে তুলবে। এর ফলে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যেও প্রভাব পড়তে পারে। কারণ বিশ্ব বাজারে অস্থিরতা দেখা দিলে, পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে এবং সরবরাহ ব্যবস্থায়ও ব্যাঘাত ঘটতে পারে। যদিও এই মুহূর্তে বিষয়টি সরাসরি বাংলাদেশের সঙ্গে জড়িত নয়, তবে বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনের দিকে আমাদের নজর রাখতে হবে। কারণ, এর প্রভাব আমাদের অর্থনীতিতে পড়তে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন