যুক্তরাষ্ট্রের কর্পোরেট দুনিয়ায় কর্মপরিবেশে আসছে পরিবর্তন: ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিমালার প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্রে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বিভিন্ন ‘বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি’ (Diversity, Equity, and Inclusion – DEI) বিষয়ক নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ায় দেশটির বেসরকারি খাতের কর্মপরিবেশে পরিবর্তনের সুর বাজছে। ট্রাম্প প্রশাসন এই ধরনের নীতিকে ‘অবৈধ’ হিসেবে চিহ্নিত করে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে। এর ফলস্বরূপ, অনেক কোম্পানি এখন তাদের কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের জন্য ডিইআই বিষয়ক কার্যক্রম নতুন করে সাজাচ্ছে।
বিষয়টি ঠিক কী, তা বোঝার জন্য প্রথমে ডিইআই ধারণাটি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার। ডিইআই হলো কর্মক্ষেত্রে বিভিন্নতা, সবার জন্য সমান সুযোগ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ তৈরির একটি প্রক্রিয়া। এর মূল উদ্দেশ্য হলো, কর্মীদের মধ্যে তাদের জাতি, লিঙ্গ, ধর্ম, শারীরিক সক্ষমতা বা অন্য কোনো পরিচয় নির্বিশেষে, সবাই যেন নিজেদের মূল্যবান মনে করেন এবং কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের ডিইআই বিষয়ক নীতির সমালোচনা এবং সম্ভাব্য পরিবর্তনের কারণে, অনেক কোম্পানি এখন ডিইআই শব্দটির পরিবর্তে ‘অন্তর্ভুক্তি’ (inclusion) এবং ‘প্রতিভা কৌশল’ (talent strategy) -এর মতো শব্দ ব্যবহার করছে। উদাহরণস্বরূপ, তারা এখন বলতে পারে, কীভাবে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সংস্কৃতি তাদের কর্মীদের জন্য ভালো, অথবা কীভাবে তারা আরো বেশি মানুষের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি করতে পারে। ডিইআই বিষয়ক পদে কর্মী নিয়োগের সংখ্যাও কমে যেতে পারে। তবে, ডিইআই-এর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্মীদের দক্ষতা এখনো গুরুত্বপূর্ণ, কারণ কোম্পানিগুলো বুঝতে পারছে যে কর্মীদের মধ্যে বিভিন্নতা তাদের ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিইআই বিষয়ক আলোচনা এখন শুধু কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর অধিকার রক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এখানে নিউরো-বৈচিত্র্য (স্নায়ুগত ভিন্নতা) এবং ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের মতো বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। অর্থাৎ, কর্মীদের মধ্যে ভিন্ন মানসিকতা ও ভৌগোলিক অবস্থান থেকেও যেন সকলে কাজের সুযোগ পায়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।
এই পরিবর্তনের ফলে কর্মীদের মধ্যে কিছুটা দ্বিধা তৈরি হয়েছে। একটি জরিপে দেখা গেছে, যেসব কর্মীর প্রতিষ্ঠানে ডিইআই বিষয়ক কার্যক্রম কমে গেছে, তাদের ৬৩ শতাংশ মনে করেন, তাদের কোম্পানির এই বিষয়ে আগ্রহ কমে গেছে। এছাড়া, এলজিবিটিকিউ (LGBTQ) সম্প্রদায়ের কর্মীরা, বিশেষ করে রূপান্তরকামী (transgender) ব্যক্তিরা, এই পরিবর্তনের কারণে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। কারণ, ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে এই সম্প্রদায়ের অধিকার বিষয়ক নীতিগুলোতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের প্রশিক্ষণ বিষয়ক ভিডিওগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আগে কর্মীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক ছিল, যেখানে কর্মক্ষেত্রে হয়রানি, পক্ষপাতিত্ব এবং বৈষম্য সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হতো। এখন সেই প্রশিক্ষণগুলো হয়তো আগের মতো নাও থাকতে পারে। তবে, এর মানে এই নয় যে কর্মক্ষেত্রে হয়রানি বা বৈষম্য এখন বৈধ।
কোম্পানিগুলোতে কর্মীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ‘কর্মচারী সংস্থান গোষ্ঠী’ (Employee Resource Groups – ERGs) রয়েছে। এই গোষ্ঠীগুলো সাধারণত কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণির কর্মীদের জন্য তৈরি করা হয়, যেমন – নারী কর্মী বা এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের কর্মী। ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির কারণে এই গোষ্ঠীগুলো বিলুপ্ত হবে না, তবে তাদের কার্যকারিতা এবং উদ্দেশ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। এখন থেকে সম্ভবত এই গোষ্ঠীগুলোকে ব্যবসার লক্ষ্য অর্জনে আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিবর্তনের ঢেউ বিশ্বজুড়ে কর্মপরিবেশের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, ডিইআই ধারণাটি এখনো তেমন পরিচিত নয়, তবে বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি এবং কিছু স্থানীয় সংস্থায় এর চর্চা শুরু হয়েছে। এই পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের কর্মপরিবেশেও ডিইআই বিষয়ক নীতি এবং চর্চায় পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন