মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র রপ্তানির ক্ষেত্রে তার শীর্ষস্থান আরও সুসংহত করেছে, এবং এক্ষেত্রে ইউরোপ এখন তাদের প্রধান ক্রেতা। স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউট (SIPRI)-এর নতুন তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী অস্ত্র রপ্তানির ৪৩ শতাংশই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের দখলে। দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র রপ্তানিকারক ফ্রান্সের হিস্যা ছিল এর চার ভাগের এক ভাগের কম।
সোমবার প্রকাশিত এসআইপিআরআই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের হিস্যা ছিল ৩৫ শতাংশ। গত এক দশকে ইউরোপ ক্রমশ মার্কিন অস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে।
রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করার পর, গত পাঁচ বছরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ন্যাটো সদস্য দেশগুলোতে আমদানি করা অস্ত্রের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। যেখানে ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে এই হার ছিল অর্ধেকের সামান্য বেশি।
এই তথ্য ইউরোপের নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর দ্বি-মুখী নির্ভরতা তুলে ধরে। একদিকে তারা মার্কিন অস্ত্রের উপর নির্ভরশীল, অন্যদিকে কোনো সম্ভাব্য যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সাহায্যের ওপরও তাদের ভরসা।
তবে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে। গত মাসে, মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব বলেছেন, ইউরোপকে তাদের নিজস্ব নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটো জোটের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আছে, তবে এমন “অসম ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক” তারা আর মেনে নেবে না, যা নির্ভরশীলতাকে উৎসাহিত করে।
এমনকি ইউরোপ থেকে নিজেদের আরও দূরে সরিয়ে নিতে, ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের উপায় খুঁজতে মস্কোর সঙ্গে আলোচনা করেছে, যেখানে ইইউ বা ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
বর্তমানে, ইউরোপ নিজেদের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিশাল পরিমাণ অর্থ খরচ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো গত বছর তাদের সম্মিলিত মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ১.৯ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করেছে। তবে ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই ব্যয় আরও অনেক বাড়ানোর আহ্বান জানানো হচ্ছে। ন্যাটোর মহাসচিব সম্প্রতি বলেছেন, ইউরোপীয় সামরিক ব্যয় “৩ শতাংশের বেশি” হওয়া উচিত।
বৃহস্পতিবার, ইইউ-এর ২৭টি সদস্য রাষ্ট্র প্রতিরক্ষা খাতে কয়েক বিলিয়ন ইউরো (প্রায় ১ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা) ব্যয়ের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। ইইউ নেতারা জোটের প্রধানের একটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছেন, যেখানে দেশগুলোকে ১৫ হাজার কোটি ইউরো (প্রায় ১৬ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা) পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। মাসের শেষে অনুষ্ঠিতব্য পরবর্তী বৈঠকে এই পরিকল্পনাটি আরও বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করা হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন