মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্ককে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করেন। তার মতে, এটি আমেরিকার উৎপাদন খাতকে শক্তিশালী করবে, বাণিজ্য ঘাটতি কমাবে এবং বিদেশি রাষ্ট্রগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত মানতে বাধ্য করবে।
শুল্ক আরোপের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করা সম্ভব হবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি কমাতে এবং করের বোঝা হালকা করতে সহায়ক হবে।
ট্রাম্পের এই ধারণা কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে, শুল্কের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানো যেতে পারে, কারণ এতে বিদেশি পণ্যের দাম বাড়ে। তবে, ট্রাম্পের পরিকল্পনায় কিছু স্ব-বিরোধীতাও দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, শুল্ক যদি কোনো দেশের উপর চাপ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে হয়, তাহলে সেই দেশ যখন যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত মেনে নেবে, তখন শুল্ক তুলে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো বা রাজস্ব আয়ের সুযোগ থাকবে না।
ট্রাম্পের শুল্ক পরিকল্পনা আমেরিকার অর্থনীতিতে ভালোোর চেয়ে বেশি ক্ষতি করতে পারে বলেও অনেকে মনে করেন। সম্প্রতি, ট্রাম্প নিজেই স্বীকার করেছেন যে শুল্কের কারণে ‘বিশৃঙ্খলা’ সৃষ্টি হতে পারে। তার বাণিজ্য নীতির ফলস্বরূপ যুক্তরাষ্ট্র মন্দা এড়াতে পারবে কিনা, এমন কোনো নিশ্চয়তা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর শেয়ার বাজারে দরপতন হয়।
ট্রাম্প শুল্কের বিষয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী। তিনি প্রায়ই সাবেক প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ম্যাককিনলেকে (যিনি একশো বছরেরও বেশি আগে বিদেশি পণ্যের উপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছিলেন) প্রশংসা করেন। ট্রাম্পের মতে, শুল্ক একটি ‘সুন্দর শব্দ’, যা আমেরিকাকে আবার ধনী করবে।
ফেন্টানাইল (fentanyl) মাদক এবং অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করতেও ট্রাম্প শুল্ককে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছেন। মেক্সিকো ও কানাডার উপর আরোপিত শুল্কের মূল উদ্দেশ্য হল এই দুটি দেশকে ফেন্টানাইল সরবরাহ এবং অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করতে বাধ্য করা। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুথনিক বলেছেন, দেশগুলো যদি ফেন্টানাইলের প্রবেশ কমাতে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেয়, তাহলে শুল্ক তুলে নেওয়া হবে।
অন্যদিকে, ট্রাম্প শুল্কের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয়ের সম্ভাবনা দেখেন। গত সপ্তাহে কংগ্রেসে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, “আমরা কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করব এবং আগে কখনো দেখা যায়নি এমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করব।
এছাড়া, “আমরা এত ধনী হব যে আপনারা বুঝতে পারবেন না এই টাকা কোথায় ব্যয় করবেন।
তবে, এই শুল্ক কতদিন বহাল থাকবে, তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ফেন্টানাইল সমস্যার সমাধান হলে যদি শুল্ক তুলে নেওয়া হয়, তাহলে দীর্ঘমেয়াদে রাজস্ব আয়ের পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ফেডারেল বাজেট সংক্রান্ত একটি কমিটির হিসাব অনুযায়ী, চীন, মেক্সিকো ও কানাডার উপর ট্রাম্পের শুল্ক বছরে প্রায় ১২০ বিলিয়ন ডলার এবং ১০ বছরে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার রাজস্ব যোগ করতে পারে।
ট্রাম্প প্রায়ই বলেন, “যদি কোনো কোম্পানি আমেরিকায় পণ্য তৈরি না করে, তবে তাদের শুল্ক দিতে হবে।
তিনি চান, আমেরিকার কোম্পানিগুলো দেশেই উৎপাদন করুক।
এছাড়াও, শুল্কের মাধ্যমে আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং বিদেশি দেশগুলোর সঙ্গে ‘ন্যায্য বাণিজ্য’ প্রতিষ্ঠা করতে চান ট্রাম্প। অন্য দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শুল্ক ব্যবহার করেছে এবং এখন যুক্তরাষ্ট্রের পালা—এমনটাই মনে করেন তিনি।
অর্থনীতিবিদরা সাধারণত বাণিজ্য ঘাটতিকে ক্ষতি বা ভর্তুকি হিসেবে দেখেন না। বরং এটি একটি শক্তিশালী অর্থনীতির লক্ষণ হতে পারে। শুল্ক আমেরিকার বাণিজ্য ব্যবধানকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন