হালকা ব্যায়াম, সামান্য অসুস্থতায় উপকারী: বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
শীতকালে ঠান্ডা লাগা, ফ্লু’র মতো সমস্যাগুলো বেশ সাধারণ। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই ব্যায়াম বন্ধ করে দেন, যা শরীরের জন্য সবসময় ভালো নয়। হালকা অসুস্থতায় শরীরচর্চা চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে, গুরুতর অসুস্থতায় অবশ্যই বিশ্রাম প্রয়োজন।
সুইজারল্যান্ডের ফিটনেস অ্যাপ ‘জিং কোচ’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ওয়াল্টার জিরগজা বলেন, “শারীরিকভাবে একেবারে নিস্তেজ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, শরীরে শক্তি কমে এবং সেরে উঠতে বেশি সময় লাগে। তাই, সঠিক পরিমাণে ব্যায়াম করা উপকারী।”
চিকিৎসকদের মতে, ঠান্ডা লাগা বা হালকা ফ্লু-এর সময় যদি আপনার উপসর্গগুলো নাক, কান ও গলার উপরিভাগে সীমাবদ্ধ থাকে, যেমন – হালকা মাথাব্যথা, নাক দিয়ে জল পড়া বা গলা ব্যথা, তবে হালকা থেকে মাঝারি ব্যায়াম করা যেতে পারে। তবে বুকে কফ জমা, পেট খারাপের মতো সমস্যা হলে ব্যায়াম এড়িয়ে যাওয়া উচিত। জ্বর থাকলে কোনোভাবেই ব্যায়াম করা যাবে না, কারণ জ্বর হলো শরীরের সংক্রমণ বা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার লক্ষণ।
হালকা অসুস্থতায় কী ধরনের ব্যায়াম করবেন, তা নির্ভর করে আপনার স্বাভাবিক শারীরিক সক্রিয়তা, আবহাওয়া এবং বয়স ও স্বাস্থ্যের ওপর। উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যামিলি মেডিসিন ও কমিউনিটি হেলথ বিভাগের অধ্যাপক ড. ব্রুস ব্যারেট বলেন, “যদি আপনার হালকা থেকে মাঝারি ধরনের অসুস্থতা থাকে, তাহলে ব্যায়াম চালিয়ে যেতে পারেন, তবে স্বাভাবিকের চেয়ে কম করুন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি সপ্তাহে ১০ মাইল দৌড়ান, তাহলে ঠান্ডা লাগলে ৫ মাইল দৌড়াতে পারেন। ব্যায়ামের পরিমাণ কমিয়ে দিন।”
হাঁটা হলো সবচেয়ে সহজ ও স্বাস্থ্যকর ব্যায়াম। তবে, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে ঘরের ভেতরে ব্যায়াম করাই ভালো। জিরগজার মতে, “ঠান্ডা বাতাস ফুসফুস এবং শ্বাসযন্ত্রে জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে কাশি হতে পারে বা প্রদাহ আরও বাড়তে পারে, যা অসুস্থতাকে আরও খারাপ করে তুলবে।”
বাতাসের গুণগত মানের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। খারাপ বায়ু দূষণের মধ্যে থাকলে ফুসফুসের সুরক্ষার জন্য ঘরের ভেতরে ব্যায়াম করুন।
হালকা স্ট্রেচিংও একটি ভালো উপায়, বিশেষ করে যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন না তাদের জন্য। কাঁধ ঘোরানো, পায়ের গোড়ালি ও হাতের কব্জি বৃত্তাকারে ঘোরানো, পায়ের ব্যায়াম, অথবা বসে মেরুদণ্ড বাঁকানোর মতো ব্যায়াম করতে পারেন। যোগা, কিগং এবং তাই চি-এর মতো ব্যায়ামগুলোও উপকারী। জিরগজা বলেন, “এই ব্যায়ামগুলো শরীরে খুব বেশি শক্তি খরচ করে না, তবে শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং শরীরের জয়েন্টগুলোর নড়াচড়া হয়।”
তবে, অসুস্থ অবস্থায় অতিরিক্ত ব্যায়াম করা উচিত নয়। জিরগজা বলেন, “যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি বেশি থাকে। তারা দ্রুত তাদের স্বাভাবিক ব্যায়ামের রুটিনে ফিরতে চান, যা তাদের সেরে ওঠার গতি কমিয়ে দিতে পারে এবং অসুস্থতা আবার ফিরে আসার সম্ভাবনা বাড়ায়। অতিরিক্ত ব্যায়ামের তেমন কোনো উপকারিতা নেই।”
শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ভারী ব্যায়াম করলে দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি আসতে পারে এবং এমনকি হৃদযন্ত্রের পেশিতে প্রদাহও হতে পারে, যা ‘মায়োকার্ডাইটিস’ নামে পরিচিত। ২০২১ সালের একটি গবেষণায় এমনটাই জানা গেছে।
সুস্থ হয়ে ওঠার পর আপনার ব্যায়ামের অভ্যাসের দিকে খেয়াল করুন। নিয়মিত ব্যায়াম না করলে, সুস্থ থাকতে এটিকে অভ্যাসে পরিণত করুন। ড. ব্যারেট বলেন, “যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তারা কম অসুস্থ হন এবং তাদের অসুস্থতা দ্রুত সেরে যায়।”
তিনি আরও বলেন, “যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন না, তারা যদি সপ্তাহে ২-৪ ঘণ্টা ব্যায়াম শুরু করেন, তবে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। কোভিড-১৯ এবং ফ্লু-এর টিকা কার্যকরী, তবে ব্যায়াম সব ধরনের শ্বাসকষ্টজনিত সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।”
ব্যায়াম রোগ প্রতিরোধ ও দ্রুত আরোগ্য লাভের ক্ষেত্রে সহায়ক। কিগং তেমনই একটি ব্যায়াম পদ্ধতি যা বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী চীনা পদ্ধতি, যেখানে হালকা নড়াচড়ার সঙ্গে শ্বাস-প্রশ্বাস এবং ধ্যানের সংমিশ্রণ ঘটানো হয়। কিগং এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে।
মেডিসিনস জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুযায়ী, কিগং এবং তাই চি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং প্রদাহের বিরুদ্ধে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এছাড়াও, কিগং আর্থ্রাইটিস, বিষণ্ণতা, উদ্বেগ এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
সবশেষে, হালকা ব্যায়াম শুরু করুন। জিরগজা বলেন, “কিছু না করার চেয়ে, সামান্য ব্যায়াম আপনার জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে। আমি হৃদরোগ এবং স্ট্রোকসহ হালকা থেকে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে এমন রোগীদের সঙ্গে কাজ করেছি। তাদের সবার জন্যই কিছু না কিছু ব্যায়াম উপকারী ছিল।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন