ইউরোপীয় শেয়ার বাজারগুলোতে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে, যেখানে মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইউরোর দাম উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এর প্রধান কারণ হলো ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি এবং সরকারি ব্যয় সংকোচনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক মন্দা বা ‘ট্রাম্পসেশন’ দেখা দিতে পারে, এমন আশঙ্কা।
এই পরিবর্তনের ফলে, ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর ডলারের যে ঊর্ধ্বগতি দেখা গিয়েছিল, তা বর্তমানে দুর্বল হয়ে পড়েছে।
নভেম্বরের শুরু থেকে প্রথমবারের মতো ইউরোর বিনিময় হার ১.০৯ ডলারের উপরে উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের কারণে কানাডা, মেক্সিকো এবং চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভবনা তৈরি হয়েছে।
এমনকি ইউরোপীয় বাণিজ্য অংশীদারদের উপরও শুল্ক বাড়ানোর হুমকি দেওয়া হচ্ছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
ডলারের দরপতন শুধু বৈদেশিক মুদ্রার বাজারেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং মার্কিন শেয়ার বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে।
বাজারের এই অস্থিরতার কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য মন্দা পরিস্থিতি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
সোমবার শেয়ার বাজারে দরপতনের পর মঙ্গলবার এশীয় শেয়ার সূচকগুলোতে স্থিতিশীলতা দেখা যায়।
জার্মানির ড্যাক্স সূচক ০.৭%, ফ্রান্সের বাজার ০.৫% এবং ইতালির বোরসা ০.৩% বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে, যুক্তরাজ্যের এফটিএসই ১০০ সূচক ০.২% কমেছে।
সুইজারল্যান্ডের সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি এসপিআই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্টিফেন ইননেসের মতে, বাজারের এই অস্থিরতা এখনো চূড়ান্ত পর্যায়ে না গেলেও, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি উদ্বেগ কাজ করছে।
কারণ, আগ্রাসী শুল্ক বৃদ্ধি এবং সরকারি ব্যয় কমানোর সিদ্ধান্তের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, টেসলার শেয়ারের দর পতনের পর এই কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এলন মাস্কের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের কারণ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে, টেসলার শেয়ারের দাম গত ডিসেম্বরের তুলনায় অর্ধেকের বেশি কমে গেছে।
ইউরোর মূল্যবৃদ্ধির পেছনে আরও কিছু কারণ রয়েছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, জার্মানির আর্থিক নীতিতে পরিবর্তন এবং ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার হ্রাস।
এছাড়াও, দুর্বল মার্কিন অর্থনৈতিক তথ্য এবং ইউক্রেন যুদ্ধের সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির বিষয়টিও ইউরোর উত্থানে ভূমিকা রাখছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা মার্কিন ডলারের পরিবর্তে ইউরোর দিকে ঝুঁকছেন।
অ্যাভিভা ইনভেস্টরসের একজন অর্থনীতিবিদ ভ্যাসিলিওস জিয়োনাকিসের ধারণা, বছরের শেষ নাগাদ ইউরোর বিনিময় হার ১.১৫ ডলারে এবং ২০২৬ সালের মধ্যে ১.২০ ডলারে পৌঁছাতে পারে।
তাঁর মতে, ১.১৫ ডলারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত সময়ের আগেই অর্জিত হতে পারে।
এই বাজারের অস্থিরতা বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।
ইউরোর মূল্যবৃদ্ধি দেশের আমদানি-রফতানি এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে পরিবর্তন আনতে পারে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান