যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দেওয়ায় দেশটির সামরিক সক্ষমতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করতে গিয়ে কিয়েভ এখন কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
সম্প্রতি, রাশিয়ার সীমান্তবর্তী কুর্স্ক অঞ্চলে যুদ্ধের পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগজনক। যদিও ইউক্রেনীয় সেনারা সেখানে প্রতিরোধের চেষ্টা চালাচ্ছে, তবে রুশ সেনারা কৌশলগতভাবে বেশ কিছু এলাকা নিজেদের দখলে নিতে সক্ষম হয়েছে। এর কারণ হিসেবে অনেকে মনে করছেন, মার্কিন সামরিক সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি বড় ধাক্কা।
সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন সামরিক সহায়তা বন্ধের ফলে ইউক্রেন উপগ্রহ থেকে পাওয়া গোয়েন্দা তথ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর ফলে রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শনাক্ত করতে এবং সেগুলোর জবাব দিতে ইউক্রেনীয় বাহিনীর বেগ পেতে হচ্ছে। মার্কিন সাহায্য বন্ধের পর থেকে রাশিয়ার সামরিক শক্তি আরও বেড়েছে, যা ইউক্রেনের জন্য উদ্বেগের কারণ।
অন্যদিকে, ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরা তাঁদের নিজস্ব প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার চেষ্টা করছেন। তাঁরা ড্রোন তৈরি এবং ইলেক্ট্রনিক যুদ্ধ ব্যবস্থা উন্নত করার দিকে মনোযোগ দিয়েছেন। কিয়েভভিত্তিক একটি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়ারোস্লাভ ফিলিমোনভ জানিয়েছেন, তাঁরা তাঁদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে শত্রুদের মোকাবেলা করার চেষ্টা করছেন।
তবে, সাহায্য বন্ধের কারণে ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, বিশেষ করে অত্যাধুনিক প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে এবং সেগুলোর মজুদ সীমিত। ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের কারণে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ বিভিন্ন শহরে প্রায়ই সাইরেন বাজছে এবং সাধারণ মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
কিয়েভের একজন প্যারামেডিক মারিয়া মিনচেঙ্কো জানিয়েছেন, যখনই বিস্ফোরণের শব্দ শোনেন, তখনই তাঁর মনে হয়, আর কত দিন তাঁদের এই পরিস্থিতিতে থাকতে হবে। বয়স্ক রোগীদের মধ্যে হৃদরোগ ও প্যানিক অ্যাটাকের সংখ্যাও বেড়ে গেছে বলে তিনি জানান।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত শুধু ইউক্রেনের জন্য নয়, বরং বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের জন্য একটি অশনি সংকেত। কারণ, এর ফলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আগ্রাসী মনোভাব আরও বাড়তে পারে।
অন্যদিকে, ইউক্রেনীয় বাহিনী সম্প্রতি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ কোটলিনো শহরটি পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে, মার্কিন সামরিক সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ইউক্রেনের সামরিক সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা দেশটির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা