যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে সাইকেল চালানোর এক অসাধারণ প্রকল্পের খবর পাওয়া যাচ্ছে। ‘গ্রেট আমেরিকান রেল-ট্রেইল’ নামের এই প্রকল্পটির কাজ ২০২৮ সাল নাগাদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে ওয়াশিংটন স্টেট থেকে ওয়াশিংটন ডিসি পর্যন্ত প্রায় ৩,৭০০ মাইল পথ জুড়ে সাইকেল চালানোর ব্যবস্থা করা হবে। ইতোমধ্যে এর কিছু অংশ তৈরি হয়ে গেছে এবং ২০২৫ সাল নাগাদ ওয়াশিংটন স্টেটে প্রায় ৪০০ মাইলের মতো পথ সাইকেল চালকদের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে।
আসলে, এটি পুরনো রেললাইনগুলোকে সাইকেল চালানোর উপযোগী করে তোলার এক দারুণ পরিকল্পনা। এই পথে ভ্রমণকারীরা আমেরিকার বিভিন্ন জাতীয় পার্ক, বনভূমি আর প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। এই রুটের শেষ অংশটি লিংকন মেমোরিয়ালের পাশ দিয়ে যাবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলের দিকে এগিয়ে গেছে।
এই রেল-ট্রেইলের আকর্ষণীয় কিছু অংশ হলো:
- **অলিম্পিক ডিসকভারি ট্রেইল:** ১৩৫ মাইল দীর্ঘ এই ট্রেইলটি সাইকেল আরোহীদের জন্য দারুণ এক অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে। এখানে পাইন গাছ পরিবেষ্টিত অঞ্চলে, ওলিম্পিক ন্যাশনাল পার্কের সবুজ অরণ্যে আর মাউন্ট অলিম্পাসের বরফাবৃত চূড়ার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা যায়। এরপর হুয়ান দে ফুকা প্রণালীর পাশ দিয়ে পোর্ট টাউনসেন্ড পর্যন্ত যাওয়া যাবে, যা উনিশ শতকের পুরনো স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত।
- **বার্ক- গিলম্যান ট্রেইল:** যারা শহরের জীবন ভালোবাসেন, তাদের জন্য ২০ মাইল দীর্ঘ এই পথটি দারুণ। সিয়াটলের ঝলমলে জলাভূমি থেকে শুরু করে লেক ওয়াশিংটনের উত্তর প্রান্ত পর্যন্ত এর বিস্তার। এখানকার কফি শপ, বাইকের দোকান আর হস্তনির্মিত বিয়ারের দোকানগুলো ভ্রমণকারীদের আকর্ষণ করে। এছাড়াও, ফিশারমেন’স টার্মিনাল ডকও এখানে উল্লেখযোগ্য, যেখানে ‘ডেডিয়েস্ট ক্যাচ’ নামের টিভি শোয়ের দৃশ্য ধারণ করা হয়।
- **স্নোকোয়ালমি ভ্যালি ট্রেইল:** এই ৩১ মাইল পথের আকর্ষণ হলো স্নোকোয়ালমি জলপ্রপাত। ডেভিড লিঞ্চের বিখ্যাত টিভি সিরিজ ‘টুইন পিকস’-এর শুটিং হয়েছিল এখানকার বিভিন্ন স্থানে। সাইকেল আরোহীরা সালিশ লজ ও স্পা, রোডহাউস রেস্টুরেন্ট ও ইন এবং নর্থ বেন্ডের টুইডস ক্যাফে-র মতো স্থানগুলো ঘুরে দেখতে পারবেন।
- **প্যালস টু ক্যাসকেডস স্টেট পার্ক ট্রেইল:** যারা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য ২৩৬ মাইল দীর্ঘ এই পথটি আদর্শ। র্যাটলস্নেক লেক থেকে শুরু করে স্নোকোয়ালমি পাস হয়ে এটি আইডিহো সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানকার পুরনো রেললাইনের সেতু ও গিরিখাতগুলো সাইকেল আরোহীদের বিশেষ আকর্ষণ যোগায়।
মোটকথা, ‘গ্রেট আমেরিকান রেল-ট্রেইল’ যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের জন্য একটি দারুণ উদ্যোগ। এটি একইসঙ্গে যেমন প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ করে দেবে, তেমনি দেবে ইতিহাস আর সংস্কৃতির স্বাদ নেওয়ার সুযোগ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সাইকেল চালানো যেমন সহজ হবে, তেমনি পর্যটকদের জন্য এটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবেও পরিচিতি পাবে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক