মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুদণ্ড: ১০ দিনে ৬ জনের ফাঁসি, বিতর্কের ঝড়
যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি রাজ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রবণতা আবারও বাড়ছে, যেখানে সারা দেশে এই ধরনের শাস্তির প্রয়োগ হ্রাস পেয়েছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে দেশটির ৫টি রাজ্যে ৬ জন আসামীর ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি চলছে। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পদ্ধতি, অভিযুক্তদের বিচার প্রক্রিয়া এবং এর পেছনের উদ্দেশ্য নিয়ে উঠছে গুরুতর প্রশ্ন।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, টেক্সাস, লুইজিয়ানা, অ্যারিজোনা, ওকলাহোমা এবং ফ্লোরিডা রাজ্যে এই মৃত্যুদণ্ডগুলো কার্যকর করা হবে। এর মধ্যে কিছু রাজ্যে পুরনো পদ্ধতিতে ফাঁসি কার্যকর করার পাশাপাশি নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহারের মতো নতুন পদ্ধতিরও পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হচ্ছে।
ঐতিহ্যগতভাবে, টেক্সাস অঙ্গরাজ্যটিকে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুদণ্ডের কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০০০ সালে এখানে ৪০ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল। যদিও গত বছর এই সংখ্যা কমে ৫-এ দাঁড়িয়েছে, কিন্তু মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মানসিকতা এখনো সেখানে প্রবল। টেক্সাসের কয়েদি ডেভিড লিওনার্ড উড-কে আগামী বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টার পরে প্রাণঘাতী ইনজেকশন দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার কথা রয়েছে।
ডেভিড উডের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি এল পাসোর কাছাকাছি মরুভূমিতে ৬ জন তরুণী ও যুবতীকে হত্যা করে মাটি চাপা দিয়েছিলেন। তবে ডেভিড বরাবরই নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসছেন। তার আইনজীবীরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১০০টির বেশি আলামতের ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন জানালেও, তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
ডেভিডের মামলার শুনানিতে একজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী, যিনি উডের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে রাজি হয়েছিলেন, তাকে ২৫ হাজার ডলার পুরস্কারের লোভ দেখানো হয়েছিল বলে জানা যায়। এছাড়া, সাক্ষীকে গোয়েন্দাদের সরবরাহ করা তথ্যও সরবরাহ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
আরেকজন কয়েদি, জেসি হফম্যান-কে ১৯৯৬ সালে একজন নারীকে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৮ সালে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। যদিও ঘটনার সময় জেসি’র বয়স ছিল ১৮ বছর ২ মাস। যদি তিনি ঘটনার ২ মাস পর গ্রেপ্তার হতেন, তাহলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যেত না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে, ১৮ বছরের কম বয়সীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধান নেই।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে মানবাধিকার সংগঠনগুলো মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের তীব্র সমালোচনা করেছে। তাদের মতে, মৃত্যুদণ্ড একটি নিষ্ঠুর ও অমানবিক শাস্তি। এই ধরনের পদক্ষেপ বিচার বিভাগের দুর্বলতা এবং মানবাধিকারের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সিদ্ধান্তের পেছনে রাজনৈতিক প্রভাবও রয়েছে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে যে মনোভাব তৈরি হয়েছিল, তার প্রভাব এখনো বিদ্যমান। ট্রাম্পের সময়ে ফেডারেল পর্যায়ে ১৩ জন কয়েদির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল।
এছাড়াও, মৃত্যুদণ্ডের সঙ্গে দারিদ্র্য, শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য এবং ধর্মীয় গোঁড়ামি জড়িত বলেও অনেকে মনে করেন। তাদের মতে, এই বিষয়গুলো এমন একটি সংস্কৃতির জন্ম দেয়, যেখানে শক্তিশালী রাজনীতিবিদরা অপরাধ দমনের নামে মৃত্যুদণ্ডকে সমর্থন করেন।
অন্যদিকে, ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরাও এই শাস্তির পক্ষে তাদের সমর্থন জানান। তাদের মতে, অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলে তারা কিছুটা শান্তি পান।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের এই প্রক্রিয়া একদিকে যেমন কয়েদিদের জন্য কষ্টকর, তেমনি কারা কর্তৃপক্ষ এবং করদাতাদের ওপরও এর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান