ইউরোপে পারমাণবিক অস্ত্র: বিশ্ব শান্তির জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য দ্বিতীয় মেয়াদের ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। কোনো কোনো প্রভাবশালী নেতা মনে করছেন, নিজেদের সুরক্ষার জন্য ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের মতো পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে জার্মানির মতো দেশের পারমাণবিক চুক্তি করা উচিত। এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপের নিরাপত্তা কাঠামো নিয়ে নতুন করে জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছে।
কিন্তু এমন পদক্ষেপ কি আসলেই সঠিক? বিশেষজ্ঞদের মতে, পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার ইউরোপের জন্য একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হতে পারে। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, রাশিয়ার সামরিক শক্তি ও পারমাণবিক অস্ত্রের ভাণ্ডার অনেক বেশি শক্তিশালী। তাদের কাছে থাকা ক্ষেপণাস্ত্রগুলো যুক্তরাজ্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বিধ্বংসী।
সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া ‘এস্কালেট টু ডি-এস্কালেট’ কৌশল ব্যবহার করে। অর্থাৎ, কোনো সংঘাতের সময় তারা এমনভাবে সামরিক শক্তি প্রদর্শন করে, যা প্রতিপক্ষকে আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য করে। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সীমিত পারমাণবিক অস্ত্র সেই কৌশল মোকাবেলা করতে সক্ষম নয়।
এছাড়াও, ইউরোপের দেশগুলোর সামরিক বাজেট এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। জার্মানির সামরিক বাজেট উল্লেখযোগ্য হলেও, অনেক সরঞ্জামের আধুনিকীকরণে ঘাটতি রয়েছে। অন্যদিকে, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের নিজস্ব গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত নয়। এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি তাদের প্রতিরক্ষাখাতে বিশাল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে, তাহলেও একটি নির্ভরযোগ্য পারমাণবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করতে কয়েক দশক লেগে যাবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইউরোপের উচিত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পরিবর্তে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ এবং কূটনৈতিক আলোচনার ওপর জোর দেওয়া। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তিগুলো ভেঙে যাওয়ার ফলে বিশ্বে নতুন করে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপ আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিশ্ব শান্তিরক্ষার জন্য অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অতীতেও দেখা গেছে, চরম বৈরী সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও দেশগুলো অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে একমত হয়েছে। যেমন ১৯৮০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যেও ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
ইউরোপের দেশগুলো যদি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দিকে ঝুঁকে, তবে তা বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ হবে। এর পরিবর্তে, তারা যদি অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ এবং কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানে আগ্রহী হয়, তবে তা কেবল ইউরোপের জন্যই নয়, বরং বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্যও শান্তির পথ সুগম করবে। কারণ, যুদ্ধ ও অস্ত্র প্রতিযোগিতা বিশ্ব অর্থনীতিকে দুর্বল করে দেয়, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ক্ষতির কারণ।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা