যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বরং এর বাইরেও বিভিন্ন দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ভোক্তাদের ওপর এর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য হলো অভ্যন্তরীণ শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া এবং বাণিজ্য ঘাটতি কমানো।
তবে, বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এর ফলে পণ্যের দাম বাড়তে পারে, যা মার্কিন অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
বিশেষ করে, গাড়ি, বিদ্যুতের সরঞ্জাম এবং নির্মাণ সামগ্রীর মতো শিল্পগুলোতে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ব্যবহার অনেক বেশি।
এই ধাতুগুলোর দাম বাড়লে সামগ্রিকভাবে উৎপাদন খরচ বাড়বে, যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।
কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের প্রধান সরবরাহকারী দেশ।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের কারণে কানাডার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক আরও কঠিন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
যদিও কানাডার প্রধানমন্ত্রী ডগ ফোর্ড এবং মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য বসতে রাজি হয়েছেন, তবুও শুল্ক বহাল থাকলে উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তাৎক্ষণিকভাবে এর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
তারা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক ‘অযৌক্তিক’।
এর জবাবে, ইইউ প্রায় ২৮ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করতে পারে।
এই পদক্ষেপ একটি সম্ভাব্য বাণিজ্য যুদ্ধের ইঙ্গিত দেয়, যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ।
আগে, ট্রাম্প প্রশাসন চীন, মেক্সিকো এবং কানাডার ওপর শুল্ক আরোপ করেছিল।
তবে, এবারের সিদ্ধান্তটি ব্যাপক এবং সব দেশের জন্য প্রযোজ্য।
এর ব্যতিক্রম হিসেবে চীনকে দেখা যেতে পারে, কারণ তাদের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর বিদ্যমান শুল্কের সঙ্গে এই নতুন শুল্ক যুক্ত হয়ে মোট করের পরিমাণ ৪৫ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াবে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীও এই শুল্কের সমালোচনা করেছেন।
তিনি বলেছেন, এই ধরনের বাণিজ্য নীতি ‘অর্থনৈতিক আত্মঘাতী’ এবং এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ধীর করে দেবে।
তবে, অস্ট্রেলিয়া পাল্টা কোনো শুল্ক আরোপ করবে না বলে জানিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের দাম বাড়িয়ে দেবে।
ইতিমধ্যে, অভ্যন্তরীণ বাজারে ইস্পাতের দাম গত দুই মাসে ৩০ শতাংশের বেশি এবং অ্যালুমিনিয়ামের দাম ১৫ শতাংশ বেড়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হলো বিশ্ববাজারে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের দাম বৃদ্ধি পেলে, দেশের আমদানি ব্যয় বাড়বে।
এর ফলে নির্মাণ সামগ্রী, গাড়ির যন্ত্রাংশ এবং অন্যান্য শিল্পপণ্যের দাম বাড়তে পারে, যা দেশের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি ঘটাতে পারে।
তাই, বিশ্ব অর্থনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের দিকে বাংলাদেশের সতর্ক দৃষ্টি রাখা উচিত।
তথ্য সূত্র: সিএনএন