সিরিয়ার আল-হোল শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী মানুষগুলোর জীবন এখন এক গভীর আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটছে। যুদ্ধের বিভীষিকা আর উদ্বাস্তু জীবনের কঠিন বাস্তবতার সাথে তারা প্রতিনিয়ত লড়ছে। এখানকার মানুষের মনে এখন একটাই প্রশ্ন – কবে মুক্তি মিলবে এই দুঃসহ জীবন থেকে?
আল-হোল শিবিরটি সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। এখানে কয়েক হাজার মানুষের বাস, যাদের অধিকাংশই বিভিন্ন সময়ে বাস্তুচ্যুত হয়ে এখানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। এদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। যুদ্ধের কারণে ঘরবাড়ি হারানো এই মানুষগুলো খাদ্য, চিকিৎসা এবং নিরাপত্তার অভাবে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এখানকার জীবনযাত্রার মান অত্যন্ত নিম্নমানের। শিবিরে বিশুদ্ধ পানির অভাব, স্বাস্থ্যকর পরিবেশের অভাব এবং পর্যাপ্ত খাদ্যের সরবরাহ নেই।
শিবিরের বাসিন্দাদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করে। তাদের মধ্যে অনেকে আইএসআইএস (ISIS)-এর সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে নজরদারির শিকার হচ্ছে। তাদের মনে হয়, কেউ যেন তাদের প্রতিটি কথা শুনছে। এই সন্দেহের কারণে তারা নিজেদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে কথা বলতেও ভয় পায়। বিশেষ করে নারীদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। তারা একদিকে যেমন যুদ্ধের ক্ষত বহন করছে, তেমনই আবার সমাজের নানা কুসংস্কার আর সন্দেহের শিকার হচ্ছে। অনেক শিশুই তাদের বাবা-মাকে হারিয়েছে এবং তারা জানে না তাদের ভবিষ্যৎ কী।
শরণার্থী শিবিরে বসবাস করা মানুষগুলোর জীবনে টিকে থাকার লড়াইটা অত্যন্ত কঠিন। তারা তাদের হারানো স্বজনদের জন্য আকুল হয়ে ওঠে, নিজেদের জন্মভূমিতে ফিরে যেতে চায়। তাদের একটাই প্রার্থনা – এই কঠিন জীবন থেকে মুক্তি, একটু আশ্রয় আর স্বাভাবিক জীবনের প্রত্যাশা। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো মাঝে মাঝে এখানে ত্রাণ বিতরণ করে, কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য।
আল-হোল শরণার্থী শিবিরের পরিস্থিতি একটি গভীর মানবিক সংকট। এখানে বসবাস করা মানুষগুলোর দুঃখ-দুর্দশা, তাদের টিকে থাকার সংগ্রাম বিশ্ববাসীর মনোযোগ আকর্ষণ করা উচিত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই শরণার্থীদের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং তাদের মানবিক সহায়তার জন্য আরও বেশি পদক্ষেপ নিতে হবে। তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা এবং একটি নিরাপদ ও স্থিতিশীল ভবিষ্যতের ব্যবস্থা করা জরুরি।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা