যুক্তরাষ্ট্রের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশটির অর্থনীতিতে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, যা বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধ আরো বাড়িয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বুধবার (যেদিন সংবাদটি লেখা হয়েছে) থেকে এই নতুন শুল্ক কার্যকর হয়েছে এবং এর ফলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও কঠিন হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে চীন, কানাডা এবং মেক্সিকোর মতো দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক আরোপ করা হলেও, এবার সেই শুল্কের পরিমাণ আরও বাড়ানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, অ্যালুমিনিয়ামের ওপর আগে যে ১০ শতাংশ শুল্ক ছিল, সেটিও বাড়ানো হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই শুল্কের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে কারখানাগুলোতে কর্মসংস্থান বাড়বে। তবে অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, এর ফলে ব্যবসার খরচ বাড়বে এবং অর্থনৈতিক মন্দা আরও ঘনীভূত হতে পারে।
এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ইইউ বলছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি ২৮ বিলিয়ন ডলারের শুল্ক আরোপ করে, তবে তারা পাল্টা ২৬ বিলিয়ন ইউরোর (ডলারের হিসেবে প্রায় ২৮ বিলিয়ন) শুল্ক আরোপ করবে। এই শুল্ক ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম ছাড়াও টেক্সটাইল, গৃহস্থালীর সরঞ্জাম এবং কৃষি পণ্যের ওপরও কার্যকর হবে। আগামী ১ এপ্রিল থেকে ইইউর এই পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম শিল্পের কিছু লাভ হতে পারে, তবে এর চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হবে সেইসব প্রস্তুতকারকদের, যারা এই ধাতুগুলো কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে। কারণ, তাঁদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২১ সালে শুল্কের কারণে এই ধরনের প্রস্তুতকারকদের উৎপাদন প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন ডলার কমে গিয়েছিল, যেখানে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদনকারীদের উৎপাদন বেড়েছিল মাত্র ২.৩ বিলিয়ন ডলার।
তবে, ট্রাম্প মনে করেন, শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে আরও বেশি কারখানা তৈরি হবে এবং এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান বাড়ানো সম্ভব হবে। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভলভো, ফোকসওয়াগেন এবং হোন্ডার মতো কোম্পানিগুলো যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর কথা ভাবছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটির প্রধান ইস্পাত রপ্তানিকারক দেশগুলো হলো কানাডা, মেক্সিকো, ব্রাজিল, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান। একইসঙ্গে তাইওয়ান ও ভিয়েতনাম থেকেও ইস্পাত রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। চীন বিশ্বের বৃহত্তম ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশ হলেও, যুক্তরাষ্ট্র তাদের থেকে খুব সামান্যই আমদানি করে। অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান সরবরাহকারী দেশ হলো কানাডা।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এমন বাণিজ্য নীতির প্রভাব বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বাংলাদেশ বিভিন্ন ধরনের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্য আমদানি করে এবং রপ্তানিও করে থাকে। শুল্ক বৃদ্ধির ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়তে পারে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের নতুন বাণিজ্য কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস