স্বাস্থ্যখাতে এক নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার (ultraprocessed foods)। উন্নত বিশ্বে এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে গবেষণা চললেও, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, বিশেষ করে বাংলাদেশে এর প্রভাব এখনো সেভাবে আলোচনা হয় না। সম্প্রতি, এই ধরনের খাবারের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার জনস্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।
অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার আসলে কী? সহজ ভাষায় বলতে গেলে, এই খাবারগুলো কারখানায় তৈরি হয় এবং এতে স্বাদ, গন্ধ ও সংরক্ষণের জন্য নানা ধরনের রাসায়নিক উপাদান মেশানো হয়। এই তালিকায় রয়েছে ইনস্ট্যান্ট নুডলস, চিপস, বিভিন্ন ধরনের প্যাকেটজাত বিস্কুট, কোমল পানীয় এবং ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবার। এইসব খাবারে প্রায়ই অতিরিক্ত চিনি, লবণ ও ফ্যাট থাকে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
বর্তমানে, আমাদের দেশেও অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের চাহিদা বাড়ছে, বিশেষ করে শহর ও শহরতলিতে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে। ব্যস্ত জীবনযাত্রার কারণে সহজে তৈরি করা যায়, এমন খাবারের প্রতি মানুষের ঝোঁক বাড়ছে, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে। শিশুদের টিফিন থেকে শুরু করে রাতের খাবার পর্যন্ত, এই ধরনের খাবারের উপস্থিতি এখন বেশ সাধারণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে মানুষের শরীরে নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— ওজন বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ে। এছাড়াও, শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও এর নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায়।
যদিও এই বিষয়ে গবেষণা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, তবে কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিতভাবে এই ধরনের খাবার গ্রহণ করেন, তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশি। উদাহরণস্বরূপ, যারা ফাস্ট ফুড ও প্যাকেটজাত খাবার বেশি খান, তাদের মধ্যে হৃদরোগের সম্ভবনা বেশি থাকে।
তাহলে, এই সমস্যার সমাধান কী? পুষ্টিবিদরা বলছেন, সবার আগে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। খাবারের তালিকা থেকে অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার বাদ দিতে হবে অথবা এর পরিমাণ কমাতে হবে। টাটকা ফল, সবজি এবং বাড়িতে তৈরি খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। খাদ্য লেবেল ভালোভাবে দেখে, উপাদান সম্পর্কে ধারণা নিয়ে খাবার নির্বাচন করা উচিত। চিনি ও লবণের অতিরিক্ত ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তাই এই বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
সরকার এবং খাদ্য প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোরও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। খাদ্য নীতিমালায় পরিবর্তন আনা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই সমস্যা মোকাবিলা করা যেতে পারে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, সুস্থ জীবন যাপনের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অপরিহার্য। অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করে এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি সুস্থ জীবন উপহার দিতে পারি।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস