যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের সঙ্গে চলমান সংঘাতের মধ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আকস্মিকভাবেই কুর্স্ক অঞ্চলে সফর করেছেন।
বুধবারের এই সফরে তিনি সেনাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন।
একই সময়ে, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে এক মাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে, যা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চলছে আলোচনা।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত ফুটেজে দেখা যায়, সামরিক পোশাকে সজ্জিত হয়ে পুতিন ফ্রন্টলাইনের সৈন্যদের সঙ্গে কথা বলছেন।
তিনি তাদের বলেন, খুব দ্রুত সম্ভব কুর্স্ককে সম্পূর্ণভাবে ‘মুক্ত’ করাই মস্কোর লক্ষ্য।
উল্লেখ্য, গত বছর ইউক্রেনীয় বাহিনীর অপ্রত্যাশিত অভিযানের পর এই প্রথম তিনি পশ্চিমাঞ্চলীয় এই এলাকা সফর করলেন।
পুতিনের এই সফর এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হলো যখন রুশ বাহিনী ইউক্রেনের অভ্যন্তরে তাদের শেষ ঘাঁটিগুলোর দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
এর আগের দিনই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি আলোচনা হয়, যেখানে কিয়েভ (Kyiv) যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত এক মাসের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি হয়।
কুর্স্কে রাশিয়ার এই দ্রুতগতিতে অভিযান, যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা যখন আলোচনার কেন্দ্রে, তখন কিয়েভের একমাত্র দর কষাকষির ক্ষমতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার বলেছেন, এখন বল রাশিয়ার কোর্টে।
তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য এরই মধ্যে রাশিয়া গেছেন।
ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, “আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
এখন সব রাশিয়ার উপর নির্ভর করছে।”
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বুধবার সাংবাদিকদের জানান, পুতিন প্রস্তাবটি ‘গভীরভাবে পর্যালোচনা’ করছেন।
খুব শীঘ্রই মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর মস্কো এ বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে।
কুর্স্কের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে পুতিন ইউক্রেনীয় সৈন্যদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
তিনি সেনাবাহিনীকে এই অঞ্চলের অবশিষ্ট ইউক্রেনীয় শক্তিকে বিতাড়িত করার আহ্বান জানান এবং রাশিয়া ও ইউক্রেন সীমান্তের কাছে একটি ‘বাফার জোন’ তৈরি করারও সম্ভাবনা তুলে ধরেন।
গত আগস্টে ইউক্রেন কুর্স্কে আকস্মিক অভিযান শুরু করে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিদেশি শক্তির দ্বারা রাশিয়ার প্রথম স্থল অভিযান ছিল।
এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল রাশিয়ার দখলে থাকা ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করা এবং পূর্বাঞ্চলে চলমান যুদ্ধ থেকে মস্কোর মনোযোগ সরানো।
তবে ইউক্রেন তার অধিকৃত অঞ্চল ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে।
সম্প্রতি তারা এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করেছে।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কুর্স্কে ইউক্রেনের দখল করা এলাকার ৮৬ শতাংশের বেশি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে এবং ৪৩০ জন ইউক্রেনীয় সৈন্যকে বন্দী করা হয়েছে।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনীও স্বীকার করেছে যে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে কুর্স্কের বেশ কয়েকটি বসতি থেকে তাদের বিতাড়িত করা হয়েছে।
ইউক্রেনের শীর্ষ জেনারেল ওলেক্সান্ডার সিরস্কি কৌশলগতভাবে আরও সুবিধাজনক অবস্থানে পিছু হটার ইঙ্গিত দিয়েছেন, যার মূল উদ্দেশ্য হলো ‘ইউক্রেনীয় সৈন্যদের জীবন বাঁচানো’।
এদিকে, পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ আগামী কয়েক দিনের মধ্যে রাশিয়া যেতে পারেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন