থাইল্যান্ড ভ্রমণে গিয়ে একজন সাধারণ মানুষের জীবন কীভাবে বদলে যেতে পারে, তারই এক ভিন্ন চিত্র পাওয়া যায় সম্প্রতি প্রকাশিত একটি লেখায়। লেখক মূলত একজন পর্যটক যিনি থাইল্যান্ডে গিয়ে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর জীবন থেকে শুরু করে নাইট লাইফের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, এমনকি একটি জনপ্রিয় টিভি সিরিজের শুটিংয়েও অংশ নিয়েছেন।
লেখকের অভিজ্ঞতা শুরু হয় রাজধানী ব্যাংককের কাছে ধুতানগা ইনসাইট মেডিটেশন সেন্টারে। সেখানে তিনি কয়েক সপ্তাহ সন্ন্যাসীর জীবন যাপন করেন। ভোরে পাখির ডাক আর ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দে ঘুম ভাঙা, এরপর ধ্যান, মন্ত্র পাঠ, ধর্মচর্চা এবং বাগান পরিচর্যা ছিল তার দৈনন্দিন রুটিন।
লেখকের ভাষায়, এই সময়টা ছিল জীবনের এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা।
সন্ন্যাস জীবন ত্যাগ করার পর লেখক পা রাখেন ব্যাংককের কোলাহলপূর্ণ খাও সান রোডে। নাইট লাইফের ঝলমলে দুনিয়ায় নিজেকে আবিষ্কার করেন তিনি। বন্ধুদের সাথে বার-এ গিয়ে স্বল্প মূল্যের পানীয় পান করা, হাসি-ঠাট্টার মধ্যে রাতের আলোয় গা ভাসিয়ে দেওয়া—এসবের অভিজ্ঞতা তাকে থাইল্যান্ডের অন্য এক রূপের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়।
লেখক বুঝতে পারেন, থাইল্যান্ডে একদিকে যেমন গভীর আধ্যাত্মিকতা বিদ্যমান, তেমনি উন্মাদনারও অভাব নেই।
এরপর তিনি যান কোহ ফাঙ্গানে, যেখানে একদিকে ছিল আধ্যাত্মিকতার কেন্দ্র শ্রী থানু, যেখানে যোগা ও তন্ত্র বিষয়ক কর্মশালা হতো, তেমনই ছিল ফুল মুন পার্টির মতো জমজমাট আয়োজন। এই দ্বৈততার মাঝেই লেখক খুঁজে পান এক নতুন জগৎ।
একদিন তিনি জানতে পারেন, একটি জনপ্রিয় মার্কিন টিভি শো ‘দ্য হোয়াইট লোটাস’-এর শুটিংয়ে অংশ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। সুযোগটা হাতছাড়া না করে তিনি যোগ দেন শুটিংয়ে। যেখানে তিনি একজন ধ্যান শিক্ষার্থীর ভূমিকায় অভিনয় করেন।
শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা লেখকের কাছে ছিল খুবই আকর্ষণীয়। প্রতিদিন প্রায় ৬ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি অভিনয় করতেন। সেটে তিনি বিভিন্ন দেশের মানুষের সঙ্গে পরিচিত হন, যাদের মধ্যে ছিলেন সাধারণ পর্যটক থেকে শুরু করে স্থানীয় শিল্পী ও কলাকুশলী।
শুটিংয়ের ফাঁকে তারা গল্প করতেন, কার্ড খেলতেন এবং একসাথে সময় কাটাতেন।
তবে লেখকের মতে, ‘দ্য হোয়াইট লোটাস’-এ থাইল্যান্ডের সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রার একটি অসম্পূর্ণ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে থাইল্যান্ডের স্থানীয় চরিত্রগুলোর উপস্থাপনায় আরও মনোযোগ দেওয়া উচিত ছিল।
লেখকের মতে, একজন পর্যটকের চোখে থাইল্যান্ডের আসল রূপ আরও গভীর এবং বহুমাত্রিক।
পর্যটকদের নতুন জায়গা অন্বেষণের এই প্রবণতা আসলে কতটা গভীর, সেই প্রশ্নও রেখেছেন লেখক। আমরা কি সত্যিই নতুন সংস্কৃতিতে নিজেদের নিমজ্জিত করি, নাকি পুরনো অভ্যাসের সঙ্গেই নতুন গন্তব্যে পৌঁছে যাই?
লেখকের মতে, এর উত্তর নির্ভর করে ভ্রমণকারীর ওপর।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার