তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে জানিয়েছেন, চীন তাইওয়ানের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি ও অনুপ্রবেশের মাত্রা আরো বাড়াচ্ছে। এর মোকাবিলায় তাইওয়ানের সরকার বেইজিংয়ের ‘আত্মীকরণের’ প্রচেষ্টা রুখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে চলেছে। বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় লাই এই কথা বলেন।
তিনি জানান, বেইজিং তাইওয়ানের সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছে, যার মধ্যে অপরাধী গোষ্ঠী, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব এবং পুলিশ কর্মকর্তাও রয়েছেন।
লাই বলেন, “তারা [চীন] আমাদের অভ্যন্তরীণ বিভেদ, ধ্বংস এবং নাশকতামূলক কার্যকলাপ চালাচ্ছে।
চীনের এই অপচেষ্টা রুখতে তাইওয়ান আরও কঠোর পদক্ষেপ নেবে। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাকে তিনি ‘ধূসর অঞ্চলের’ কার্যকলাপ হিসেবে উল্লেখ করেন, যা সরাসরি সশস্ত্র সংঘাতের পর্যায়ে পড়ে না, তবে এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ।
সরকারের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর চীনের গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ৬৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যা ২০২১ সালের তুলনায় তিনগুণ বেশি।
লাই বলেন, “অনেকেরই আশঙ্কা, এসব প্রভাব বিস্তারের অভিযান এবং কারসাজির কারণে আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং সমৃদ্ধি ধীরে ধীরে হারাতে বসেছি।”
প্রেসিডেন্ট লাই চীন থেকে তাইওয়ানে আসা নাগরিকদের ভিসা ও বসবাসের আবেদন কঠোরভাবে পর্যালোচনার প্রস্তাব করেছেন।
একইসঙ্গে সামরিক আদালতের কার্যক্রম পুনরায় চালুর প্রস্তাবও দিয়েছেন তিনি।
তিনি আরও জানান, তাইওয়ানের সরকার দুই দেশের মধ্যে অর্থ, মানুষ ও প্রযুক্তির প্রবাহে “প্রয়োজনীয় সমন্বয়” আনবে। তবে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।
উল্লেখ্য, চীন তাইওয়ানকে তাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করে, তবে তাইওয়ানের ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি (DPP) চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে কার্যত স্বাধীনতা বজায় রাখতে চায়।
আট বছর আগে বর্তমান প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের নির্বাচনের পর থেকে চীনের সঙ্গে DPP-এর প্রায় সব ধরনের আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
১৯৪৯ সালের গৃহযুদ্ধের পর উভয় পক্ষ আলাদা হয়ে যায়।
সম্প্রতি, তাইওয়ানের এক নাগরিকের চীনা স্ত্রীকে তাইওয়ান থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কয়েকটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন, যেখানে তিনি বলেছিলেন যে চীন আধ ঘণ্টার মধ্যে তাইওয়ান জয় করবে এবং চীনা নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন।
তাইওয়ানের আইনে এই ধরনের কাজকে শত্রুতার সহায়তাকরণ হিসেবে গণ্য করা হয়।
ওই নারী, যিনি চীনের সরকারি পরামর্শক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন, পাঁচ বছর পর আবার তাইওয়ানে বসবাসের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
এছাড়াও, তাইওয়ানে বসবাস করা কিছু শিল্পী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বিবৃতিগুলো পুনঃপ্রকাশ করেছেন, যেখানে তাইওয়ানের উপর চীনের সার্বভৌমত্বের দাবি জানানো হয়েছে।
তাইপে মনে করে, পপ তারকাদের বেইজিংপন্থী মন্তব্য করতে বাধ্য করার জন্য এটি একটি চলমান প্রচারণার অংশ।
লাই জানিয়েছেন, তাইওয়ানে পারফর্ম করা অভিনেতা ও গায়কদের “বিবৃতি এবং কার্যক্রমের” বিষয়ে সরকার সতর্কবার্তা দেবে।
তিনি আরও বলেন, “আমাদের আরও সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে হবে।”
লাইয়ের ভাষ্যমতে, অবসরপ্রাপ্ত তাইওয়ান সামরিক বাহিনীর সদস্যরা দ্বীপটির অস্ত্র ব্যবস্থার তথ্য চীনা এজেন্টদের কাছে পাচার করেছে এবং কর্মরত সামরিক সদস্যদের গুপ্তচর হিসেবে নিয়োগ করার চেষ্টা করেছে।
চীন নিয়মিতভাবে তাইওয়ানের আকাশসীমা ও জলসীমায় যুদ্ধজাহাজ ও বিমান পাঠায়, যা দ্বীপটির ২ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষকে ভয় দেখানোর এবং তাদের সশস্ত্র বাহিনী ও মনোবল দুর্বল করার প্রচেষ্টা।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা