এক সময়ের কিংবদন্তী ‘ক্যাঙ্গারু রুট’ ফিরে আসছে, তবে এবার কিছুটা ভিন্ন রূপে। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্টাস এয়ারলাইন্স (Qantas) তাদের পুরনো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে চলেছে, তবে অতীতের সেই দীর্ঘ, বহু স্টপেজ-এর ফ্লাইট-এর বদলে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন এক বিলাসবহুল ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
১৯৪৭ সালে কুইন্টাস-এর প্রথম ফ্লাইটটি ছিল সিডনি থেকে লন্ডন পর্যন্ত। ‘ক্যাঙ্গারু রুট’ নামে পরিচিত এই রুটে বিমানটি ডারউইন, সিঙ্গাপুর, কলকাতা (তৎকালীন ক্যালকাটা), করাচি, কায়রো এবং ত্রিপোলি হয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছাত। পুরো ভ্রমণে সময় লাগতো প্রায় চার দিন। বিমানের যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ছিল মাত্র ২৯ জন। টিকিটের মূল্য ছিল তখনকার দিনে প্রায় ৫২৫ পাউন্ড, যা আজকের হিসেবে প্রায় ২২,৪৫০ মার্কিন ডলারের সমান!
বর্তমানে, আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে সিডনি থেকে লন্ডনে যেতে সময় লাগে অনেক কম। কিন্তু যারা একটু বেশি সময় হাতে নিয়ে ভিন্ন কিছু করতে চান, তাদের জন্য ক্যাপ্টেন’স চয়েস (Captain’s Choice) নামের একটি বিলাসবহুল ভ্রমণ সংস্থা নিয়ে এসেছে ‘পায়োনিয়ারিং স্পিরিট অফ দ্য ক্যাঙ্গারু রুট’ নামে ১৪ দিনের এক বিশেষ ভ্রমণ প্যাকেজ।
এই ভ্রমণে যাত্রীরা কুইন্টাস এয়ারবাস এ৩৩০-৩০০ বিমানে চড়ে ডারউইন, সিঙ্গাপুর, কলকাতা, কলম্বো, কায়রো, টুলুস এবং রোম-এর মতো বিভিন্ন শহরে যাত্রা বিরতি করবেন। প্রতিটি গন্তব্যে তারা বিলাসবহুল হোটেলে থাকার সুযোগ পাবেন এবং সেখানকার আকর্ষণীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখতে পারবেন। কলকাতা, এক সময়ের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল, যা আজও তার ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য বিখ্যাত।
ক্যাপ্টেন’স চয়েস-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বাস বসচিটার (Bas Bosschieter) জানান, এই রুটের ডিজাইন করতে তারা কুইন্টাসের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। তারা ঐতিহাসিক বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলেছেন এবং ভ্রমণের সময় পুরনো রুটের কিছু স্মৃতিচিহ্ন যুক্ত করার পরিকল্পনা করছেন। এর মধ্যে রয়েছে পুরনো দিনের স্মারক সামগ্রী, কুইন্টাসের প্রাক্তন পাইলটদের অভিজ্ঞতা শোনানো এবং সম্ভবত স্বাগত জানানোর অনুষ্ঠানে একটি সুপার কনস্টেলেশন বিমান রাখা।
ভ্রমণটির জনপ্রতি খরচ শুরু হচ্ছে প্রায় ৪৯,৯৫০ অস্ট্রেলীয় ডলার (প্রায় ৩৬ লক্ষ টাকার বেশি) থেকে। এই প্যাকেজের মধ্যে রয়েছে সব ধরনের খাবার, পানীয়, হোটেল খরচ, ভ্রমণ এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। যাত্রীরা তাদের ব্যক্তিগত আগ্রহ অনুযায়ী গন্তব্যগুলোতে ভ্রমণ পরিকল্পনা সাজাতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ, শ্রীলঙ্কায় তারা একজন কিংবদন্তী ক্রিকেটার এর সাথে সাক্ষাত করতে পারবেন, এছাড়াও রোমে তারা ভ্যাটিকান জাদুঘর ব্যক্তিগতভাবে ঘুরে দেখার সুযোগ পাবেন।
যাত্রীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে ইকোনমি ক্লাসে আসন সংখ্যা সীমিত রাখা হয়েছে, যাতে প্রত্যেক যাত্রী বেশি জায়গা পান। এই কারণে, বিজনেস ক্লাসের আসনগুলো এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে।
কুইন্টাস ২০২৩ সাল থেকে তাদের বহুল প্রতীক্ষিত ‘প্রজেক্ট সানরাইজ’ -এর অধীনে সিডনি থেকে লন্ডন এবং নিউইয়র্ক-এর মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু করার পরিকল্পনা করছে। এই ফ্লাইটে অত্যাধুনিক এয়ারবাস এ350-1000 বিমান ব্যবহার করা হবে এবং এতে সময় লাগবে প্রায় ২০ ঘণ্টা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পেরথ থেকে শ্রীলঙ্কা হয়ে লন্ডনে যাওয়া বিমানের পাইলটরা দিনের আলোয় দুটি সূর্যোদয় দেখতেন, সেই থেকেই এই প্রকল্পের নামকরণ করা হয়েছে ‘সানরাইজ’।
কুইন্টাস ২০১৯ সালে এই রুটের জন্য তিনটি পরীক্ষামূলক ফ্লাইট পরিচালনা করে, যেখানে পাইলট, ক্রু এবং যাত্রীদের দীর্ঘ সময় বিমানে থাকার শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা যাচাই করা হয়েছিল। এই ফ্লাইটগুলোতে যাত্রীদের ঘুমের ধরন, খাবার এবং বিনোদন সহ বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করা হয়।
এতে একদিকে যেমন পুরোনো দিনের ভ্রমণের স্মৃতিচারণ করা হচ্ছে, তেমনি বিমান ভ্রমণের আধুনিকতাকেও তুলে ধরা হচ্ছে। কুইন্টাস-এর এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে ভ্রমণ প্রেমীদের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন