রাজকীয় ব্যালে’র খ্যাতিমান শিল্পী স্টিভেন ম্যাকরের মঞ্চে মারাত্মক আঘাত এবং ‘রোমিও’ রূপে প্রত্যাবর্তনের গল্প
নৃত্যশিল্পীদের জীবন কতটা কঠিন, তা হয়তো সাধারণ মানুষের ধারণা নেই। কঠোর অনুশীলন, শরীরের উপর চরম চাপ এবং সীমাহীন ত্যাগের বিনিময়ে তারা দর্শকদের আনন্দ দেন। তেমনই একজন শিল্পী হলেন স্টিভেন ম্যাকরে। রয়েল ব্যালে’র এই প্রধান নৃত্যশিল্পী, যিনি এক ভয়ংকর আঘাতের শিকার হয়েও ফিরে এসেছেন, ‘রোমিও’ চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে।
২০০৭ সালে, ম্যাকরের শিল্পীজীবন এক নতুন দিগন্তে পৌঁছেছিল। রয়েল ব্যালে’র হয়ে ‘রোমিও’ চরিত্রে প্রথমবার মঞ্চে নামাটা ছিল তাঁর কাছে স্বপ্নের মতো। কিন্তু ২০১৯ সালের অক্টোবরে, এক ভয়ংকর ঘটনার সাক্ষী হন তিনি। মঞ্চে পারফর্ম করার সময় অ্যাকিলিস টেন্ডন ছিঁড়ে যায় তাঁর। চোখের সামনে যেন তাঁর শিল্পীজীবন শেষ হয়ে যাচ্ছিল।
আঘাত পাওয়ার পর, ম্যাকরের মনে হয়েছিল, তাঁর নাচের জীবন বুঝি শেষ হয়ে গেল। একদিকে যেমন ছিল শারীরিক যন্ত্রণা, তেমনই ছিল ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা। কিভাবে তিনি তাঁর পরিবারের খরচ চালাবেন, সেই চিন্তাও তাঁকে গ্রাস করেছিল। এর মধ্যে তিনি ভেঙে পড়েন।
তবে, ম্যাকরের পরিচালক কেভিন ও’হার তাঁকে সাহস জুগিয়েছিলেন। তিনি ম্যাকরের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে আবার মঞ্চে ফিরিয়ে আনার জন্য সবরকমের চেষ্টা করতে থাকেন। ম্যাকরের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় এবং দ্রুত সেরে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ম্যাকরের কঠিন যাত্রা ক্যামেরাবন্দী করার জন্য এগিয়ে আসেন ফরাসি চলচ্চিত্র নির্মাতা স্তেফান ক্যারেল। এই ডকুমেন্টারি ম্যাকরের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল।
চিকিৎসা চলাকালীন, ম্যাকরে বুঝতে পারেন, একজন নৃত্যশিল্পীর স্বাস্থ্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি উপলব্ধি করেন, শরীরের প্রতি যত্ন নেওয়াটা একজন খেলোয়াড়ের মতোই জরুরি। কঠোর পরিশ্রমের পাশাপাশি শরীরের বিশ্রাম এবং সঠিক পুষ্টির প্রয়োজন। ম্যাকরে বলেন, “আমরা মনে করি, আমাদের হাতে বেশি সময় নেই, তাই সবকিছু এখনই করতে হবে। কিন্তু স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিলে, আমরা আরও দীর্ঘ এবং সফল কর্মজীবন গড়তে পারি।”
২০২১ সালে, ম্যাকরে আবার মঞ্চে ফিরে আসেন। ‘রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’-এর মাধ্যমে তিনি তাঁর প্রত্যাবর্তনের ঘোষণা করেন। এরপর ২০২৩ সালে, তিনি আবারও আহত হন, এবার হাঁটুর লিগামেন্টে চোট পান।
আঘাত এবং সংগ্রামের এই দীর্ঘ পথ পেরিয়ে ম্যাকরে আবারও ‘রোমিও’ চরিত্রে অভিনয় করতে প্রস্তুত। তাঁর এই প্রত্যাবর্তন শুধু তাঁর নিজের জন্য নয়, বরং ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য এক অনুপ্রেরণা। ম্যাকরের মতে, “জীবনে সমস্যা আসতেই পারে, তবে সঠিক মানুষের সঙ্গ থাকলে, সবকিছু জয় করা সম্ভব।”
স্টিভেন ম্যাকরের জীবন নিয়ে নির্মিত বিবিসি’র তথ্যচিত্র ‘ড্যান্সিং ব্যাক টু দ্য লাইট’ ১৪ই মার্চ প্রচারিত হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।