মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে, যার কেন্দ্রে রয়েছে অ্যালকোহল এবং বিভিন্ন পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের হুমকি।
এই পরিস্থিতিতে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপীয় মদ, শ্যাম্পেন এবং অন্যান্য অ্যালকোহল জাতীয় পণ্যের উপর ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
এর কারণ হিসেবে জানা যায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমেরিকান হুইস্কির উপর শুল্ক বসানোর পরিকল্পনা করছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইউরোপের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়ায় ইইউ এই পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।
ইইউ-এর এই শুল্ক আগামী ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
ট্রাম্প এক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া পোস্টে জানান, ইইউ যদি আমেরিকান হুইস্কির উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, তাহলে তিনি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘যদি এই শুল্ক অবিলম্বে প্রত্যাহার করা না হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ফ্রান্স এবং অন্যান্য ইইউভুক্ত দেশ থেকে আসা সকল প্রকার মদ, শ্যাম্পেন ও অ্যালকোহল জাতীয় পণ্যের উপর ২০০ শতাংশ শুল্ক বসাবে।
এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের মদ ও শ্যাম্পেন ব্যবসায়ীরা লাভবান হবে।’
এই বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে সাধারণ ভোক্তাদের উপর কেমন প্রভাব পড়তে পারে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
তবে, ইতোমধ্যেই এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, ১৫ ডলার দামের একটি ইতালীয় প্রসেকো (Prosecco) বোতলের দাম ৪৫ ডলারে গিয়ে পৌঁছতে পারে।
একইসাথে, প্যারিসে ৩০ ডলারের একটি বোরবন (Bourbon) বোতলের দাম বেড়ে ৪৫ ডলার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নও এই হুমকির কাছে নতি স্বীকার করতে রাজি নয়।
ফরাসি বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রী লরেন্ট সেন্ট-মার্টিন এক টুইট বার্তায় জানান, ‘ট্রাম্প বাণিজ্য যুদ্ধকে আরও বাড়িয়ে তুলছেন।
ফ্রান্স, ইউরোপীয় কমিশন এবং আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে মিলে এর মোকাবিলা করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
আমরা কোনো হুমকির কাছে নতি স্বীকার করব না এবং আমাদের শিল্পকে রক্ষা করব।’
তবে, ইউরোপীয় মদ প্রস্তুতকারকরা এই বাণিজ্য যুদ্ধকে আর্থিক দিক থেকে ধ্বংসাত্মক হিসেবে দেখছেন।
ফরাসি ওয়াইন ও স্পিরিট রপ্তানিকারক ফেডারেশন (এফইভিএস) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় মদ ও স্পিরিটকে শুল্কের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া উচিত।
তাদের মতে, যখন ফরাসি ওয়াইন ও স্পিরিট শিল্প অর্থনৈতিক এবং ভূ-রাজনৈতিক কারণে অত্যন্ত দুর্বল অবস্থায় রয়েছে, তখন ইইউ-এর এই সিদ্ধান্ত হতাশাজনক।
যুক্তরাষ্ট্রের হুইস্কি প্রস্তুতকারকরাও ট্রাম্পের কাছে একটি সমঝোতায় আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ-এর মধ্যে স্পিরিট খাতের বাণিজ্য একটি আদর্শ উদাহরণ।
১৯৯৭ সাল থেকে এখানে কোনো শুল্ক নেই।
‘আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, তিনি যেন ইইউ-এর সঙ্গে একটি সমঝোতা করেন, যাতে আমরা আবার শূন্য শুল্কে ফিরতে পারি।
এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসংস্থান বাড়বে এবং আমেরিকান আতিথেয়তা খাতে উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ইউরোপ যখন যুক্তরাষ্ট্রের হুইস্কির উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, তখন ইইউ-তে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি ২০ শতাংশ কমে গিয়েছিল।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।