যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব সীমিত করার একটি আবেদন জানিয়েছে। এই আবেদনের মূল উদ্দেশ্য হলো, যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া, তবে যাদের বাবা-মা অবৈধভাবে বসবাস করছেন, এমন শিশুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা। খবরটি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এপি।
আবেদনটিতে ট্রাম্প প্রশাসন চাইছে, আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসার আগে এই নিয়ম আংশিকভাবে কার্যকর করা হোক। এর ফলে ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারির পরে জন্ম নেওয়া শিশুদের নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হবে। একইসঙ্গে, এই ধরনের শিশুদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করে এমন কোনো নথি তৈরি বা গ্রহণ করতে পারবে না যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থাগুলো।
আবেদনটির পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির বিচার বিভাগ যুক্তি দেখাচ্ছে যে, কিছু বিচারকের দেওয়া দেশব্যাপী নিষেধাজ্ঞার ক্ষমতা সীমিত করা উচিত। তাদের মতে, কোনো নির্দিষ্ট আদালতের একার পক্ষে এমন সিদ্ধান্ত দেওয়া সম্ভব নয়, যা পুরো দেশের ওপর প্রভাব ফেলবে।
আদালতে দেওয়া আবেদনে ট্রাম্প প্রশাসন চাইছে, যারা সরাসরি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা করেনি, তাদের ক্ষেত্রে যেন এই নিয়ম কার্যকর করা যায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাজ্যগুলোর এই বিষয়ে কোনো মামলা করার অধিকার নেই।
আবেদনে আরও বলা হয়েছে, যদি কোনো কারণে এই নীতি কার্যকর করার অনুমতি পাওয়া যায়, তাহলে কিভাবে এটি বাস্তবায়ন করা হবে, সে বিষয়ে তারা যেন জনগণকে জানাতে পারে।
এই আবেদনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভারপ্রাপ্ত সলিসিটর জেনারেল সারা হ্যারিস তার বক্তব্যে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী অনুযায়ী, জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিষয়টি সবার জন্য প্রযোজ্য নয়।
তবে, জরুরি ভিত্তিতে করা এই আবেদন সরাসরি নাগরিকত্বের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে না। এর পরিবর্তে, এটি মূলত কিছু ফেডারেল বিচারকের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার ব্যাপকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। অতীতে এই ধরনের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আদালতের কয়েকজন সদস্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত রায় দেয়নি। অতীতে, মুসলিম দেশগুলোর ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারির সময় ট্রাম্প প্রশাসন একই ধরনের যুক্তি দেখিয়েছিল।
আদালত অবশেষে ট্রাম্পের নীতি বহাল রাখলেও, দেশব্যাপী নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি বিবেচনা করেনি। সারা হ্যারিস বৃহস্পতিবার আদালতে বলেন, এই সমস্যা এখন আরও বেড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, তিনি জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসেই আদালত প্রশাসনকে বাধা দিয়ে ১৫টি আদেশ জারি করেছে, যেখানে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শাসনামলের প্রথম তিন বছরে এমন আদেশের সংখ্যা ছিল ১৪টি।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই দ্রুত পদক্ষেপ মূলত ক্ষমতা গ্রহণের অল্প সময়ের মধ্যেই নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে হাজার হাজার ফেডারেল কর্মীকে বরখাস্ত করা, বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ সাহায্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ, ট্রান্সজেন্ডার মানুষের অধিকার খর্ব করা এবং জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব সীমিত করার মতো সিদ্ধান্তগুলো উল্লেখযোগ্য।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)