জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে শুক্রবার (তারিখ উল্লেখ করা হয়নি) কক্সবাজার এসেছিলেন। মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কায় জাতিসংঘের এই শীর্ষ কর্মকর্তার সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ খাদ্য সংকটের কারণে রোহিঙ্গাদের জীবনধারণ চরম ঝুঁকিতে পড়েছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, সাহায্য কমে যাওয়ায় আগামী মাস থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্য সহায়তা কমানো হতে পারে।
বর্তমানে প্রত্যেক রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য মাসিক খাদ্য ভাউচার বাবদ ১২.৫০ মার্কিন ডলার (যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১,৩৫০ টাকার সমান) বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু সাহায্য কমে গেলে এটি কমিয়ে ৬ মার্কিন ডলারে (প্রায় ৬৫০ টাকা) নামিয়ে আনা হতে পারে। এর ফলে শরণার্থী শিবিরগুলোতে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার বাড়ছে, যা গভীর উদ্বেগের কারণ।
যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) প্রধান সাহায্যকারী দেশ ছিল। কিন্তু সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সাহায্য খাতে দেশটির বরাদ্দ কমে যাওয়ায় খাদ্য সহায়তা কমে যাওয়ার এই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে, ২০১৭ সালের পর থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ বছর ফেব্রুয়ারিতে গুরুতর অপুষ্টির শিকার শিশুদের হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা ২৭ শতাংশ বেড়েছে।
কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী মোহাম্মদ সাবির নামের ৩১ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা শরণার্থী বলেন, “বর্তমানে যা পাচ্ছি, তা আমাদের জন্য যথেষ্ট নয়। যদি এটি অর্ধেক করা হয়, তবে আমরা না খেয়ে मर যাবো।” তিনি আরও বলেন, “এখানে আমাদের কাজ করার অনুমতি নেই। পাঁচ সন্তানের বাবা আমি, তাদের কথা ভেবে অসহায় লাগে। তাদের কী খাওয়াবো সেই চিন্তায় রাতে ঘুম আসে না।”
মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে আসা এই শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের উপর চরম চাপ পড়েছে। কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোতে বর্তমানে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মুসলিম আশ্রয় গ্রহণ করেছে। তাদের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা এবং শিক্ষার ব্যবস্থা করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের মহাসচিবের এই সফর শরণার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা আরও বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া, বাংলাদেশের বর্তমান সরকারও চায়, গুতেরেসের এই সফরের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে এবং শরণার্থীদের পাশাপাশি বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্যেও আরও বেশি সাহায্য পাওয়া যাবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা