এলোন মাস্কের ক্ষমতা বাড়ছে, কমছে টেসলার শেয়ারের দাম!
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে টেক বিলিয়নেয়ার ইলন মাস্কের ‘বন্ধুত্ব’ যেন এখন সবার চোখে পড়ার মতো। হোয়াইট হাউসের দক্ষিণ লনে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে মাস্ক টেসলার তৈরি করা অত্যাধুনিক গাড়িগুলো প্রদর্শন করেন, যেখানে ট্রাম্প টেসলার গাড়িতে ভাঙচুরকারীদের ‘দেশীয় সন্ত্রাসী’ হিসেবে চিহ্নিত করার অঙ্গীকার করেন।
কিন্তু এই সময়েই টেসলার শেয়ারের দর ক্রমাগত কমছে। গত সোমবার, টেসলার শেয়ারের দাম ১৫ শতাংশ কমে যায়, যা ২০২০ সালের পর একদিনে হওয়া সবচেয়ে বড় দরপতন। নভেম্বরে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এটাই শেয়ারের সর্বনিম্ন দর। যদিও মঙ্গলবার সকালে হোয়াইট হাউসে টেসলার গাড়ির প্রদর্শনের পর শেয়ারের দাম কিছুটা বাড়ে, দিন শেষে তা আবার স্থিতিশীল হয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টেসলার শেয়ারের এই দর পতনের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। তাদের মতে, শেয়ারের অতিরিক্ত মূল্যায়নই (overvaluation) এর প্রধান কারণ। এছাড়াও, নতুন মডেলের গাড়ি বাজারে আনতে বিলম্ব হওয়া এবং ইউরোপসহ অন্যান্য বাজারে বিক্রি কমে যাওয়াও উদ্বেগের কারণ। জার্মানিতে গত বছর একই সময়ে যেখানে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি বেড়েছে, সেখানে টেসলার বিক্রি কমেছে ৭৬ শতাংশ। চীনের বাজারেও টেসলার বিক্রি প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে।
অন্যদিকে, বাজারে অন্যান্য বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে চীন ও অন্যান্য দেশগুলোতে। এই পরিস্থিতিতে, টেসলা তাদের গাড়ির দাম কমালেও তা দীর্ঘমেয়াদে কোম্পানির মুনাফার ওপর প্রভাব ফেলছে। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিং প্রযুক্তি এবং রোবোটিক্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে উদ্ভাবনেও টেসলার প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল করতে পারছে না।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইলন মাস্কের অন্যান্য ব্যবসায়িক উদ্যোগের প্রতি মনোযোগ দেওয়া। টেসলার পাশাপাশি, তিনি এক্স (সাবেক টুইটার)-এর মালিক। ২০১৪ সালে ৪৪ বিলিয়ন ডলারে টুইটার কেনার পর থেকে এটি তার জন্য আর্থিক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাস্কের রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে অনেক বিজ্ঞাপনদাতা এক্স থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এছাড়াও, তিনি বিভিন্ন সময় ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যা অনেকের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মাস্কের এই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড টেসলার ব্র্যান্ডের ভাবমূর্তির ওপর প্রভাব ফেলেছে। পরিবেশ সচেতন ক্রেতারা সাধারণত টেকসই প্রযুক্তির সমর্থন করেন, যারা ট্রাম্পের সমর্থক নন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, মাস্ক সম্ভবত টেসলার সাফল্যের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের বিষয়গুলোর প্রতি বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও বাণিজ্য নীতি বিশেষজ্ঞ রবার্ট স্কট মনে করেন, মাস্কের সরকারে সক্রিয় অংশগ্রহণ সম্ভবত অর্থনীতির জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ, যেমন বৈদ্যুতিক গাড়ির ভর্তুকি কমানো বা চীনের ওপর শুল্ক আরোপের মতো বিষয়গুলো টেসলার জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে।
টেসলার শেয়ারের দর পতনের পেছনে মাস্কের বহুমুখী ব্যবসায়িক ব্যস্ততা এবং রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা একটি বড় কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা