যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে সম্ভাব্য এক মাসের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চলছে। এই আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন অভিজ্ঞ ব্রিটিশ কূটনীতিবিদ জোনাথন পাওয়েল। তিনি ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের মুখ্য সচিব ছিলেন। বর্তমানে কিয়েভ এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেখা যাচ্ছে।
জানা গেছে, এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি মূলত যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও জার্মানির কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফল। এই আলোচনার মূল কারিগরদের মধ্যে জোনাথন পাওয়েল অন্যতম। তিনি সরাসরি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং তার চিফ অব স্টাফের সঙ্গে প্রস্তাবটির শর্তাবলী নিয়ে আলোচনা করেছেন। এরপর, সৌদি আরবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে চূড়ান্ত আলোচনা হয়, যেখানে এই প্রস্তাবটিকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পাওয়েলের কূটনৈতিক দক্ষতা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি বিশেষভাবে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমারের কাছে পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে সামাজিক মাধ্যমে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানানোর পরিবর্তে, উভয় দেশের নেতাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়।
লেবার পার্টির সংসদ সদস্য এমিলি থর্নবেরি পাওয়েলের কাজের প্রশংসা করে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও ফ্রান্সের সঙ্গে আলোচনা করে এবং ইউক্রেনে গিয়ে প্রস্তাব তৈরি করা – এটি একটি বিরাট সাফল্য।”
জোনাথন পাওয়েল একসময় হংকং চীনকে ফিরিয়ে দেওয়া এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক আলোচনাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি স্টারমারের বৈদেশিক নীতি বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন।
তবে, তার ওপর অতিরিক্ত কাজের চাপ নিয়ে অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ মনে করেন, এত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলানোর কারণে তার পক্ষে সব দিকে মনোযোগ দেওয়া কঠিন হতে পারে। ব্রিটিশ সরকারের অভ্যন্তরীণ সূত্রে খবর, পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ল্যামির সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করার জন্য পাওয়েলকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
পাওয়েলের এই কেন্দ্রীয় ভূমিকার কারণে প্রশ্ন উঠেছে, পররাষ্ট্র সচিব ল্যামি কি তার গুরুত্ব হারাচ্ছেন? কূটনৈতিক মহলের ধারণা, বৈদেশিক নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে ক্ষমতার কেন্দ্র প্রায়ই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ঘোরাফেরা করে। বর্তমানে, স্টারমার এই ক্ষমতা নিজের হাতে রেখেছেন।
অন্যদিকে, ডেভিড ল্যামির ঘনিষ্ঠ সূত্র জানাচ্ছে, তিনি নিজেও যুদ্ধবিরতি আলোচনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করার জন্য এক বছর ধরে কাজ করেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জোনাথন পাওয়েলের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা রয়েছে এবং তিনি পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন। বৈদেশিক নীতি বিষয়ক বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কথা বলার এবং কাজ করার ক্ষমতা তাকে দেওয়া হয়েছে, যা আগের উপদেষ্টাদের ক্ষেত্রে সবসময় দেখা যায়নি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান