বিশ্বের সাতটি শক্তিশালী দেশের জোট জি-৭ এর আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি ও কানাডার প্রতি কটূক্তির কারণে। কানাডার কুইবেকের লা মালবাইয়ে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে দেশগুলোর মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিলেও, শেষ পর্যন্ত ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে।
বৈঠকে উপস্থিত কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, গভীর রাতে আলোচনার পর তারা একটি যৌথ বিবৃতি তৈরি করতে প্রায় ৯৯ শতাংশ সফল হয়েছেন। জি-৭ ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যের অভাব নেই বলে মন্তব্য করেছেন কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি। তিনি আরও জানান, ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে তারা সমর্থন করেন এবং রাশিয়ার উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছেন।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি জানান, ইউক্রেন, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকার যুদ্ধ এবং দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের কর্মকাণ্ড নিয়ে দেশগুলো একটি সাধারণ অবস্থানে পৌঁছেছে। এই বিষয়গুলোতে জোরালো ভাষায় কথা বলা হবে।
তবে, ট্রাম্পের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের কারণে জি-৭ এর মধ্যে ফাটল দেখা দিয়েছে। কোনো প্রতিশোধ নেওয়া হলে তিনি আরও শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। এই শুল্কের কারণে জি-৭ এর সব সদস্য দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে কানাডা। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির সীমান্ত রয়েছে এবং ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে কানাডার বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেছেন। তিনি কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য বানানোর কথাও বলেন।
বাণিজ্য যুদ্ধের এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের মধ্যে সম্পর্ক আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থান এরই মধ্যে মিত্রদের উদ্বেগের কারণ হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারকো রুবিও প্রথমবারের মতো জি-৭ সম্মেলনে যোগ দিতে কানাডায় যান। সেখানে তিনি ব্রিটেন, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা রুবিওকে তাদের দেশকে বাণিজ্যিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে বাঁচাতে ট্রাম্পের ওপর প্রভাব বিস্তারের আহ্বান জানান। তবে ট্রাম্প তার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন।
কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি সাংবাদিকদের বলেন, তারা আমেরিকানদের ওপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ করবেন এবং বিকল্প পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করবেন। তার মতে, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত আমেরিকানদের ক্ষতি করবে।
রুবিও ও জোলির মধ্যে হওয়া বৈঠক নিয়েও আলোচনা হয়েছে। জোলি জানান, তাদের মধ্যে ‘স্পষ্ট’ আলোচনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘কানাডার সার্বভৌমত্ব নিয়ে কোনো আপস নেই এবং শুল্ক ও বাণিজ্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।’
এদিকে, ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে জি-৭ সদস্যরা একমত হয়েছেন। জোলি জানান, জি-৭ এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে সমর্থন করেন। এখন রাশিয়া কী প্রতিক্রিয়া দেখায়, সেদিকে সবাই তাকিয়ে আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যামি বলেন, ‘আমরা মনে করি, এখনই শর্তহীনভাবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার সময় এসেছে। ইউক্রেন তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে, এখন রাশিয়ার সিদ্ধান্তের অপেক্ষা।’
তবে, ট্রাম্পের রাশিয়াকে আবার জি-৮ এ ফিরিয়ে আনার আগ্রহ জি-৭ সদস্যদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে ইউক্রেন থেকে ক্রিমিয়া দখলের পর রাশিয়াকে জি-৮ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।