শিরোনাম: সুইডিশ একাডেমি থেকে নিউক্যাসল ইউনাইটেডের তারকা: আলেক্সান্ডার ইসাকের উত্থান
ফুটবল বিশ্বের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র আলেক্সান্ডার ইসাক। সুইডেনের অনূর্ধ্ব-১১ দল থেকে উঠে আসা এই তরুণ স্ট্রাইকার বর্তমানে নিউক্যাসল ইউনাইটেডের জার্সিতে মাঠ মাতাচ্ছেন। রবিবার লিভারপুলের বিপক্ষে কারাবাও কাপের ফাইনালে তার দিকেই তাকিয়ে থাকবে নিউক্যাসলের সমর্থকরা, কারণ ৫৬ বছরের শিরোপা খরা ঘোচানোর স্বপ্নে বিভোর তারা। ইসাকের এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে তার কঠোর পরিশ্রম, একাগ্রতা এবং শৈশবের প্রশিক্ষকদের অবদান।
স্টকহোমের এআইকে (AIK) একাডেমিতে ইসাকের ফুটবল জীবনের হাতেখড়ি। একাডেমির প্রধান পিটার ওয়েনবার্গ (Peter Wennberg) জানান, এখানে খেলোয়াড়দের গড়ে তোলার প্রক্রিয়াটা বেশ কঠিন। তবে এই কঠিন পরিবেশই ইসাকের মতো খেলোয়াড় তৈরি করেছে। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রায় ১৫০ জন খেলোয়াড় এখানে অনুশীলন করে। এই একাডেমিতে শুধু ফুটবল প্রশিক্ষণই নয়, খেলোয়াড়দের মানবিক দিকটির ওপরও জোর দেওয়া হয়। ওয়েনবার্গ বলেন, “এখানে ভালোবাসার অভাব নেই। আমরা খেলোয়াড়দের মানুষ হিসেবেও গড়ে তুলি।”
মাত্র ছয় বছর বয়সে এআইকে-তে যোগ দেন ইসাক। এরপর কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে দ্রুতই সিনিয়র দলে জায়গা করে নেন। তার অসাধারণ ফুটবল প্রতিভার বিকাশ ঘটান কোচ আন্দ্রেয়াস আলম (Andreas Alm)। মাঠের খেলায় তিনি ছিলেন যেমন শান্ত, তেমনই ছিলেন আক্রমণাত্মক। প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগে ভীতি ছড়াতে তার জুড়ি মেলা ভার ছিল।
এআইকে একাডেমিতে ইসাকের সতীর্থ ছিলেন আলেকজান্ডার স্নাকে (Alexander Snäcke)। স্নাকে বর্তমানে এই একাডেমিতে কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, “আলেক্সান্ডার (ইসাক) শান্ত ও বিনয়ী স্বভাবের হলেও, সে একজন ভালো রসিক।” তারা দুজনেই একসাথে অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিলেন। স্নাকে জানান, “ফাইনালে খেলার চেয়ে সেমিফাইনালে আমাদের বেশি নার্ভাস লাগছিল, কারণ প্রতিপক্ষ দলটা আমাদের চেয়ে শক্তিশালী ছিল। কিন্তু ইসাক দুটি গোলে সহায়তা করে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেয়।”
একাডেমির আরেকজন কোচ এলিয়াস মাইনিরজি (Elias Mineirji)। তিনি জানান, সিনিয়র দলের সাথে প্রথম অনুশীলনে ইসাকের খেলা দেখে তারা মুগ্ধ হয়েছিলেন। মাইনিরজি বলেন, “নিজের অর্ধ থেকে বল নিয়ে ইসাক যখন দৌড় শুরু করত, তখন তাকে আর কেউ ধরতে পারত না। একবার ডি-বক্সের বাইরে থেকে এমনভাবে শট নিয়েছিল যে গোলরক্ষক হতবাক হয়ে গিয়েছিল।”
ইসাকের সাফল্যের পেছনে কঠোর পরিশ্রমের পাশাপাশি তার মানবিক গুণাবলিরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ওয়েনবার্গ বলেন, “ইসাক সবসময় অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল। খেলোয়াড় হিসেবে ভালো করার পাশাপাশি সে মানুষ হিসেবেও অসাধারণ।”
ইসাকের বেড়ে ওঠা স্টকহোমের একটি সাধারণ এলাকায়। তার বাবা-মা ছিলেন ইরিত্রীয়। ইরিত্রীয় বংশোদ্ভূত হেনোক গোইটম (Henok Goitom), যিনি একসময় এআইকের হয়ে খেলেছেন এবং বর্তমানে একাডেমির কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, ইসাকের বেড়ে ওঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। গোইটম বলেন, “আমি যখনই তার (ইসাক) নাম শুনি, আমার বুকটা গর্বে ভরে যায়। তার বাবার কাছে আমি তিগ্রিনয়া ভাষা শিখেছিলাম। ইসাক যখন প্রথম দলে সুযোগ পায়, তখন আমি তার মাঝে অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা দেখতে পাই।”
ইসাকের বর্তমান সতীর্থরাও বলছেন, মাঠের বাইরেও তিনি আগের মতোই বিনয়ী ও সহজ-সরল মানুষ। বরুসিয়া ডর্টমুন্ড, উইলেম-২, রিয়াল সোসিয়েদাদ হয়ে এখন নিউক্যাসলের হয়ে খেলছেন ইসাক। তার এই সাফল্যের পেছনে এআইকে একাডেমির অবদান অনস্বীকার্য। ওয়েনবার্গ বলেন, “এটা আলেক্সের গল্প, আমরা শুধু তার যাত্রাপথের অংশ।”
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান