সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু লেখার কারণে চাকরি হারাতে পারেন? বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
বর্তমান ডিজিটাল যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। ব্যক্তিগত অনুভূতির প্রকাশ থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা—সবকিছুই যেন এখন সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু আপনি যদি আপনার কর্মক্ষেত্রের বিষয়ে, বিশেষ করে আপনার কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করে কিছু পোস্ট করেন, তাহলে কি হতে পারে? চাকরি হারানোর সম্ভবনা কতটুকু?
যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, সামাজিক মাধ্যমে কর্মীদের পোস্টের কারণে চাকরি চলে যাওয়ার ঘটনা বেশ সাধারণ। সম্প্রতি, টেসলার একজন ম্যানেজারকে বরখাস্ত করা হয়েছিল, কারণ তিনি লিংকডইনে (LinkedIn) কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এলন মাস্কের সমালোচনা করে কিছু মন্তব্য করেছিলেন। যদিও কর্মীদের অধিকার রক্ষার জন্য কিছু আইন সেখানে রয়েছে, তবে পরিস্থিতি বেশ জটিল।
সাধারণভাবে, একজন কর্মচারী সামাজিক মাধ্যমে বা অন্য কোথাও কোম্পানির সমালোচনা করলে, কোম্পানি তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে পারে। তবে, এই ধরনের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রমও রয়েছে। যেমন, কর্মীদের অধিকার রক্ষার জন্য কিছু আইন রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ন্যাশনাল লেবার রিলেশনস অ্যাক্ট (National Labor Relations Act) কর্মীদের কিছু সুরক্ষা দেয়। এই আইনের অধীনে, কর্মীরা তাদের কর্মপরিবেশ সম্পর্কিত বিষয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক ক্যাথরিন ফিস্কের মতে, যদি কোনো কর্মচারী প্রমাণ করতে পারেন যে তিনি তার সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন বা তাদের পক্ষে কথা বলছিলেন, তাহলে তার এই ধরনের বক্তব্য আইনের দ্বারা সুরক্ষিত হতে পারে। এমনকি, অন্য সহকর্মীর কোনো পোস্টে ‘লাইক’ করার মতো সাধারণ একটি বিষয়ও এই সুরক্ষার আওতায় আসতে পারে।
তবে, কর্মীদের এই ধরনের অভিযোগের প্রমাণ দেওয়া সহজ। কিন্তু আলোচনাটি অবশ্যই কর্মক্ষেত্রের নীতি এবং একাধিক কর্মীর ওপর প্রভাব ফেলে, এমন কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে হবে। যদি কোনো কর্মচারী সাধারণভাবে ‘আমার বস ভালো না’ অথবা ‘আমার কোম্পানি ভালো না’ – এই ধরনের মন্তব্য করেন, তাহলে সেইগুলো সাধারণত সুরক্ষিত নয়।
যুক্তরাষ্ট্রে পাবলিক সেক্টরের কর্মচারী, যেমন সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক বা পুলিশ অফিসারদের জন্যেও কিছু সুরক্ষা রয়েছে। তারা যদি ডিউটির বাইরে থেকে কোনো বিষয়ে মন্তব্য করেন, যা জনস্বার্থের সঙ্গে জড়িত এবং প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত না ঘটায়, তাহলে তাদের বক্তব্য প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে সুরক্ষিত।
কোম্পানিগুলো তাদের কর্মীদের কোম্পানির পণ্য বা পরিষেবার সমালোচনা করা থেকে বিরত রাখতে পারে। কিন্তু কর্মীদের, কোম্পানির বিরুদ্ধে নেতিবাচক মন্তব্য করা থেকে সরাসরি বিরত রাখতে পারে না। কর্মীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি নীতিমালা তৈরি করার সময়, কোম্পানিগুলোকে কর্মীদের মনে রাখতে হবে, কর্মীদের এমন কোনো পোস্ট করা উচিত না, যা কোম্পানির সুনাম নষ্ট করে।
যদি কোনো কর্মচারী মনে করেন যে, তার অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে এবং তাকে অন্যায়ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে, তাহলে তিনি ন্যাশনাল লেবার রিলেশনস বোর্ডের (National Labor Relations Board – NLRB) কাছে অভিযোগ করতে পারেন। বোর্ড এই অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি এই বিষয়টি বিবেচনা করি, তাহলে এখানেও কর্মীদের অধিকার রক্ষার জন্য কিছু আইন রয়েছে। কোনো কর্মচারী যদি মনে করেন যে, তার সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে কোনো ধরনের অন্যায় আচরণ করা হয়েছে, তবে তিনি শ্রম আদালতে অভিযোগ করতে পারেন। তবে, সামাজিক মাধ্যমে করা পোস্টের কারণে চাকরিচ্যুতির বিষয়টি এখনো আমাদের দেশে ততটা স্পষ্ট নয়।
সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে কর্মীদের সচেতন হওয়া উচিত। বিশেষ করে, কর্মক্ষেত্রের বিষয়ে কিছু লেখার আগে, এর সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া প্রয়োজন। কারণ, সামান্য একটি ভুল পদক্ষেপ আপনার জন্য বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন