সুইজারল্যান্ড যেন এক রূপকথার দেশ। আল্পস পর্বতমালার বরফ ঢাকা চূড়া, স্বচ্ছ হ্রদের শান্ত জল, আর সবুজ উপত্যকার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য – সবমিলিয়ে সুইজারল্যান্ড যেন এক স্বপ্নপুরী।
যারা প্রকৃতির নীরবতা ভালোবাসেন, ছবি তোলার নেশা যাদের, তাদের জন্য এই দেশ হতে পারে আদর্শ গন্তব্য। আর এই সৌন্দর্য উপভোগ করার সেরা উপায় হলো সুইস গ্র্যান্ড ট্রেন ট্যুর (Swiss Grand Train Tour)।
সুইজারল্যান্ডের এই ট্রেন ভ্রমণ আপনাকে নিয়ে যাবে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। পাহাড়, লেক আর সবুজ প্রকৃতির বুক চিরে ছুটে চলা ট্রেনগুলো যেন এক একটি চলমান সিনেমা।
এই ভ্রমণে আপনি দেখতে পাবেন জুংফ্রাউ-আলেতশ (Jungfrau-Aletsch) এর মতো ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান, যা প্রকৃতির এক দারুণ সৃষ্টি। এখানকার ম্যাটারহর্ন (Matterhorn) পর্বতশৃঙ্গও পর্যটকদের কাছে খুবই প্রিয়।
সুইস ট্রাভেল পাস (Swiss Travel Pass) থাকলে এই ভ্রমণ হয় আরও সহজ। এই পাস ব্যবহার করে আপনি সীমাহীনভাবে ট্রেন, বোট ও বাসে ভ্রমণ করতে পারেন।
এছাড়াও, প্রায় ৫০০টির বেশি জাদুঘরে বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ পাওয়া যায়, আর কিছু পর্বত ভ্রমণে পাওয়া যায় অর্ধেক দামের সুবিধা।
বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য এই পাস-এর খরচ শুরু হয় প্রায় ২৬,০০০ টাকা থেকে (পরিবর্তনশীল)।
সুইস গ্র্যান্ড ট্রেন ট্যুরের যাত্রা শুরু হতে পারে মন্ট্রেux (Montreux) থেকে। জেনেভা হয়ে এখানে পৌঁছানো যায়।
মন্ট্রেux-এর প্রধান আকর্ষণ হলো চিলন ক্যাসেল (Château de Chillon)। লেক জেনেভার পাশে একাদশ শতকে নির্মিত এই দুর্গ ইউরোপের সবচেয়ে বড় দুর্গগুলোর মধ্যে অন্যতম।
এর গথিক ও রোমানেস্ক স্থাপত্যশৈলী মুগ্ধ করার মতো। এখানকার ফ্রেডি মার্কারি ট্যুরও খুব জনপ্রিয়, যেখানে কুইন ব্যান্ডের এই কিংবদন্তির স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলো ঘুরে দেখা যায়।
মন্ট্রেux থেকে এরপর আপনার গন্তব্য হতে পারে স্পিয়েজ (Spiez)। গোল্ডেনপাস এক্সপ্রেস (Goldenpass Express) এর নীল-সোনালি কামরায় বসে আপনি উপভোগ করতে পারবেন পাহাড় আর সবুজ প্রকৃতির মনোরম দৃশ্য।
স্পিয়েজ লেকের পাশে অবস্থিত, যা শান্তিপ্রিয় মানুষের জন্য একটি আদর্শ স্থান। এখানকার স্পিয়েজ ক্যাসেল থেকেও বার্নিজ আল্পস (Bernese Alps) এবং লেকের সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়।
ভোরবেলা লেক থুন (Lake Thun)-এ নৌকায় করে ভ্রমণ আপনাকে নিয়ে যাবে ইউরোপের দীর্ঘতম গ্রাম, বিটেনবার্গ-এর (Beatenberg) পাশ দিয়ে।
এরপর আপনি যেতে পারেন ইন্টারলাকেন-এ (Interlaken)। এখানকার গ্র্যান্ড হোটেল-এর স্থাপত্যশৈলী দেখে আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য।
ইন্টারলাকেন থেকে আপনি জুংফ্রাউ পর্বতমালায় প্যারাগ্লাইডিং-এর মতো আকর্ষণীয় অভিজ্ঞতাও নিতে পারেন।
এরপরের গন্তব্য হতে পারে লুসার্ন (Lucerne)। এখানকার লেকের পাশে অবস্থিত কাঠের তৈরি চ্যাপেল ব্রিজ (Chapel Bridge) লুসার্নের অন্যতম আকর্ষণ।
এখানকার সুইস ট্রান্সপোর্ট মিউজিয়াম (Swiss Transport Museum) শিশুদের জন্য খুবই উপভোগ্য। এখানকার ইন্টারেক্টিভ প্রদর্শনীগুলো ভ্রমণকে আরও আনন্দদায়ক করে তোলে।
গথার্ড প্যানোরামা এক্সপ্রেস (Gotthard Panorama Express) -এ করে লেক লুসার্নের ওপর দিয়ে নৌকায় ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও অসাধারণ।
কুয়াশার কারণে পাহাড়গুলো মেঘে ঢাকা থাকলেও, পরিষ্কার আবহাওয়ায় আপনি এখানকার হিমবাহগুলো দেখতে পাবেন।
ট্রেনের জানালা দিয়ে দেখা যায় এক অন্যরকম জগৎ।
লোকার্নো (Locarno) শহরটি বিভিন্ন রঙের বাড়ি দিয়ে সজ্জিত। এখানকার হোটেল গার্নি ম্যুরাল্টো (Hotel Garni Muralto) থেকে লেক ম্যাজোরের (Lake Maggiore) অসাধারণ দৃশ্য দেখা যায়।
এরপর ব্রিসাগো দ্বীপপুঞ্জের (Brissago Islands) বোটানিক্যাল গার্ডেনগুলোতে আপনি বিভিন্ন ধরনের ফুল ও গাছের সমাহার দেখতে পাবেন, যা সুইজারল্যান্ডের অন্যতম আকর্ষণ।
ভ্রমণের শেষ আকর্ষণ হতে পারে সেঞ্চোভ্যালি এক্সপ্রেস (Centovalli Express)। এই ট্রেনে করে আপনি ইতালির সীমান্তবর্তী ডমোডোসোলা (Domodossola) গ্রাম পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারবেন।
সুইজারল্যান্ডের এই ট্রেন ভ্রমণ শুধু একটি ভ্রমণ নয়, এটি প্রকৃতির সাথে মানুষের একাত্মতার এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
যারা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য সুইজারল্যান্ড হতে পারে একটি আদর্শ গন্তব্য।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান