জাপান তার দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ কিউশুতে ১০০০ কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের পরিকল্পনা করছে। এই পদক্ষেপের মূল কারণ হিসেবে জানা যায়, উত্তর কোরিয়া এবং চীনের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানার মতো সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা চুক্তি নিয়ে সৃষ্ট উদ্বেগের মধ্যেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।
খবর অনুযায়ী, জাপানের এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আগামী বছর থেকে কিউশুর দুটি সামরিক ঘাঁটিতে স্থাপন করা হবে। এই ঘাঁটিগুলোতে বর্তমানে ক্ষেপণাস্ত্রের বহর রয়েছে।
ওকিনাওয়া দ্বীপপুঞ্জের কৌশলগত গুরুত্ব বিবেচনা করে সেখানে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হবে না, কারণ তাইওয়ানের খুব কাছে অবস্থিত এই দ্বীপপুঞ্জে ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপন করলে চীনের সঙ্গে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে।
জাপানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা জোরদার করতে ‘পাল্টা আঘাত হানার ক্ষমতা’ তৈরি করা হচ্ছে।
জাপানের ফুকুই প্রিফেকচারাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইওচি শিমাদা মনে করেন, চীন ও উত্তর কোরিয়ার হুমকি মোকাবিলায় জাপানের আরও শক্তিশালী অস্ত্র ব্যবস্থা তৈরি করা উচিত। তিনি আরও যোগ করেন, দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হলে জাপানের নিরাপত্তা আরও সুসংহত হবে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জাপান-যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এই চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে জাপানের নিরাপত্তা দিতে হয়, কিন্তু জাপানের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তেমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
এছাড়াও, বাণিজ্যিকভাবে জাপান যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অনেক সুবিধা লাভ করে। ট্রাম্পের এই মন্তব্যের পর অনেকেই আশঙ্কা করছেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো তাদের দীর্ঘদিনের মিত্রদের প্রতি দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে দ্বিধাগ্রস্ত হতে পারে।
টোকিওর টেম্পল ইউনিভার্সিটির রবার্ট ডুজারিক মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের জাপানের প্রতি দুর্বল মনোভাবের কারণে দু’দেশের মধ্যেকার সামরিক জোট দুর্বল হয়ে পড়েছে। এমনকি চীনের আক্রমণের মুখেও যুক্তরাষ্ট্র কোনো পদক্ষেপ নাও নিতে পারে।
এই বিষয়টি জাপানের জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ।
নতুন ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কিউশুর দুটি সামরিক ঘাঁটিতে স্থাপন করা হবে – ওইতা প্রদেশের ক্যাম্প ইউফুইন এবং কুমামোটো প্রদেশের ক্যাম্প কেঙ্গুন। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো জাপানের স্থল স্ব-প্রতিরক্ষা বাহিনীর টাইপ-১২ ভূমি থেকে জাহাজে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নত সংস্করণ।
বিশ্লেষকদের মতে, জাপানের সামরিক সক্ষমতা ধীরে ধীরে বাড়ছে। তারা মনে করেন, ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে দেশটির নিরাপত্তা নীতিতে নতুন করে ভাবতে হবে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা হামলার পর থেকে জাপানে সামরিক শক্তি বাড়ানোর বিষয়টি একরকম নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সমর্থনের ওপর নির্ভর করতে না পারলে, দেশটি হয়তো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কথা বিবেচনা করতে পারে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান