ভারতে ঔরঙ্গজেবের সমাধিস্থল ভাঙার দাবিতে হিন্দুত্ববাদীদের বিক্ষোভের জেরে কারফিউ
নয়াদিল্লি: ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় একটি শহরে সপ্তদশ শতাব্দীর মুসলিম শাসক ঔরঙ্গজেবের সমাধিস্থল ভেঙে ফেলার দাবিতে হিন্দুত্ববাদী দলগুলোর বিক্ষোভের পর অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার নাগাদ, মহারাষ্ট্র রাজ্যের নাগপুর শহরে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, সোমবার হিন্দুত্ববাদী দলগুলোর বিক্ষোভের সময় এই সংঘর্ষ বাধে। তারা ঔরঙ্গজেবের সমাধিস্থল ভেঙে ফেলার দাবি জানায়। ঔরঙ্গজেব ছিলেন একজন মুসলিম মোগল শাসক, যিনি ৩০০ বছরেরও বেশি সময় আগে মারা গেছেন।
বিধায়ক চন্দ্রশেখর বাওয়ানকুুলে জানিয়েছেন, এই সহিংসতার ঘটনায় কমপক্ষে ৩৪ জন পুলিশ সদস্য ও আরও ৫ জন আহত হয়েছেন।
এছাড়াও বেশ কয়েকটি বাড়ি ও গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মহারাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় নির্বাচিত কর্মকর্তা দেবেন্দ্র ফড়নবিশ জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীরা ‘ধর্মীয় বিষয়বস্তু পোড়াচ্ছে’ এমন গুজব ছড়ানোর পরেই সহিংসতার সূত্রপাত হয়। তাদের ইঙ্গিত ছিল পবিত্র কুরআন পোড়ানোর দিকে।
ঔরঙ্গজেবের সমাধিস্থলটি ছত্রপতি সম্ভাজি নগর শহরে অবস্থিত। শহরটি নাগপুর থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূরে। আগে এই শহরের নাম ছিল ঔরঙ্গাবাদ, যা মোগল শাসকের নামানুসারে রাখা হয়েছিল।
ঔরঙ্গজেবকে ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা ঘৃণা করেন। তাদের অভিযোগ, তিনি সপ্তদশ শতাব্দীতে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছিলেন। যদিও কিছু ইতিহাসবিদ এই ধরনের ঘটনাকে অতিরঞ্জিত বলে মনে করেন।
হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসনামলে হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। অতীতে মোদিও ঔরঙ্গজেবের সমালোচনা করে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন।
এ ধরনের মন্তব্যের কারণে দেশটির মুসলিম সংখ্যালঘুদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। তারা প্রায়ই হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের দ্বারা সহিংসতার শিকার হচ্ছেন।
সম্প্রতি, বলিউডের চলচ্চিত্র ‘ছাওয়া’ মুক্তি পাওয়ার পর ভারতে ঔরঙ্গজেবকে নিয়ে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। এই সিনেমাটি একজন হিন্দু যোদ্ধাকে নিয়ে তৈরি হয়েছে, যিনি ঔরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন।
ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে মুসলিমদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, মোদির আমলে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা আরও বেড়েছে। তারা মোদির বিরুদ্ধে মুসলমানদের প্রতি বৈষম্যমূলক নীতি গ্রহণেরও অভিযোগ করেছেন।
তবে মোদির ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
দেশজুড়ে হিন্দু চরমপন্থীরা মুসলিম উপাসনালয়গুলোতেও হামলা চালিয়েছে এবং বেশ কয়েকটি বিখ্যাত মসজিদের ওপর নিজেদের দাবি জানাচ্ছে।
তাদের যুক্তি, এই মসজিদগুলো এক সময়ের মন্দির ভেঙে তৈরি করা হয়েছে। এমন অনেক মামলা বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন।
গত বছর, মোদি উত্তর ভারতের অযোধ্যা শহরে একটি বিতর্কিত মন্দির উদ্বোধন করেন, যা হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার পর এই মন্দির তৈরি করা হয়।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস