দক্ষিণ আফ্রিকায় বিপদগ্রস্ত পেঙ্গুইন বাঁচাতে মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ এলাকা।
বিশ্বজুড়ে পরিবেশ সুরক্ষার লড়াইয়ে এবার নতুন দিগন্ত। দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূলবর্তী অঞ্চলে দ্রুত কমতে থাকা আফ্রিকান পেঙ্গুইনদের বাঁচাতে মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি দেশটির সরকার ও মৎস্যজীবীদের সংগঠনগুলির মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা এই বিরল প্রজাতির পাখিদের ভবিষ্যৎ রক্ষার ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
আফ্রিকার এই পেঙ্গুইন প্রজাতি বর্তমানে চরম বিপদের সম্মুখীন। এদের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাওয়ার মূল কারণ হলো অতিরিক্ত মাছ ধরা, বিশেষ করে সার্ডিন ও অ্যাংকোভি মাছের ব্যাপকহারে শিকার।
এই মাছগুলোই পেঙ্গুইনদের প্রধান খাদ্য। অতিরিক্ত শিকারের ফলে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে, যার ফলস্বরূপ পেঙ্গুইনদের প্রজনন ক্ষমতা কমে যাচ্ছে এবং তাদের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে।
বর্তমানে এই অঞ্চলে ১০ হাজারের কম প্রজননক্ষম পেঙ্গুইন অবশিষ্ট আছে, যেখানে এক শতাব্দী আগেও এদের সংখ্যা ছিল প্রায় ১০ লক্ষ। প্রতি বছর এদের সংখ্যা ৭.৯ শতাংশ হারে কমছে, যা সত্যিই উদ্বেগজনক।
চুক্তি অনুযায়ী, কেপ টাউনের কাছে অবস্থিত রবেন দ্বীপ এবং গকেবেরহার (পোর্ট এলিজাবেথ) কাছে অবস্থিত বার্ড দ্বীপের আশেপাশে প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এছাড়াও, আরও চারটি পেঙ্গুইন উপনিবেশের আশেপাশে সীমিত আকারে মাছ ধরা বন্ধ করা হবে। এই নিষেধাজ্ঞা আগামী ১০ বছর বহাল থাকবে এবং ছয় বছর পর এর কার্যকারিতা পর্যালোচনা করা হবে।
এই চুক্তির ফলে একদিকে যেমন পরিবেশবাদীরা খুশি, তেমনই মৎস্যজীবীদের একাংশ এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন।
তাদের মতে, পেঙ্গুইনদের সংখ্যা হ্রাসের পেছনে মাছ ধরা একমাত্র কারণ নয়। তবে, তারা বিজ্ঞানসম্মতভাবে এই ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে সহযোগিতা করতে রাজি হয়েছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার পরিবেশমন্ত্রী ডিয়ন জর্জ এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “শিল্প এবং পরিবেশবাদীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল হলো এই চুক্তি।
এর মাধ্যমে একদিকে যেমন পেঙ্গুইনদের রক্ষা করা যাবে, তেমনই মৎস্য শিল্পেরও টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।”
তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু মৎস্য আহরণ বন্ধ করাই যথেষ্ট নয়। জলবায়ু পরিবর্তন, ভূমিজ প্রাণী এবং শব্দ দূষণের মতো বিষয়গুলোও পেঙ্গুইনদের জীবনযাত্রার উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
তাই, তাদের সুরক্ষায় সামগ্রিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
আফ্রিকার এই পেঙ্গুইনদের রক্ষার লড়াই আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। পরিবেশ সুরক্ষার গুরুত্ব শুধু একটি দেশের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা।
বাংলাদেশের সুন্দরবনসহ বিভিন্ন অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য রক্ষার ক্ষেত্রেও আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান