তাজশান হেডেন-স্মিথ: বিপর্যয়ের পরে গাছ দিয়ে এলাকার পুনর্গঠন। ২০১৭ সালের জুন মাসের এক সন্ধ্যায়, লন্ডনের নর্থ কেনসিংটনের আকাশ যখন ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন, তখন ঘটে যাওয়া এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড কেড়ে নিয়েছিল ৭২টি প্রাণ।
সেই ঘটনার সাক্ষী ছিলেন তাজশান হেডেন-স্মিথ। পেশাদার ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখা এই তরুণের জীবন বদলে দেয় গ্রেনফেল টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ড।
নিজের এলাকাকে শোকের ছায়া থেকে মুক্ত করতে তিনি বেছে নেন প্রকৃতির সান্নিধ্য।
ছোটবেলায় তাজশান তাঁর তিন ভাইবোনের সঙ্গে সরকারি আবাসনে বড় হয়েছেন। ফুটবলের প্রতি ছিল তাঁর গভীর ভালোবাসা।
মায়ের গোলাপ আর ল্যাভেন্ডার গাছের মাঝে, অ্যাভোকাডো গাছের পাশে তিনি ফুটবল খেলতেন। পেশাদার ফুটবল খেলার জন্য অস্ট্রিয়া পাড়ি দেওয়ার আগে, এলাকার বন্ধুদের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক ছিল নিবিড়।
কিন্তু গ্রেনফেল টাওয়ারের ভয়াবহতা তাঁকে নাড়া দেয়। বন্ধুদের হারানোর বেদনা তাঁকে বাধ্য করে লন্ডনে ফিরে আসতে।
ফিরে আসার পর, তাজশান তাঁর এলাকার মানুষের দুঃখ দূর করতে মন দেন। তিনি দেখেন, ওয়েস্টওয়ে নামের একটি হাইওয়ের নিচে, যেখানে আশ্রয়হীন মানুষের আনাগোনা ছিল, সেখানে আবর্জনায় ভরা একটি খালি জায়গা পরে আছে।
সেই জায়গাটিকে পরিষ্কার করে তিনি তাঁর সঙ্গীর সঙ্গে মিলে গাছ লাগানো শুরু করেন। এলাকার নার্সারিগুলোও এগিয়ে আসে, প্রচুর ফুল ও গাছ দিয়ে সাহায্য করে।
স্থানীয় বাসিন্দারাও এই কাজে যোগ দেন। ধীরে ধীরে সেই স্থানটি “গ্রেনফেল গার্ডেন অফ পিস” নামে পরিচিতি লাভ করে, যা এলাকার মানুষের কাছে নতুন জীবনের প্রতীক হয়ে ওঠে।
এর পরে, তাজশান আরও পাঁচটি পরিত্যক্ত স্থানকে বাগানে রূপান্তর করেন। তিনি বুঝতে পারেন, সমাজের জন্য কিছু করার ক্ষমতা তাঁর আছে।
এই ভাবনা থেকেই তিনি ড্যানি ক্লার্ক এবং আলি ইয়েলোপের সঙ্গে মিলে “গ্রো টু নো” নামে একটি অলাভজনক সংস্থা তৈরি করেন। এই সংস্থার মূল উদ্দেশ্য হলো সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য সবুজ স্থান তৈরি করা এবং নতুন প্রজন্মের মধ্যে বাগান করার আগ্রহ তৈরি করা।
তাজশানের ভাষায়, “যদি আপনার বাগান করার সময় না থাকে, অথবা পর্যাপ্ত সম্পদ না থাকে, তবে সমাজের একটি বড় অংশ এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে।”
“গ্রো টু নো”-এর কিছু প্রকল্প জাতিগত ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। যেমন, রয়্যাল হর্টিকালচারাল সোসাইটির ২০২২ সালের চেলসি ফ্লাওয়ার শো-তে তাদের একটি বাগান তৈরি করা হয়, যা নর্থ কেনসিংটনের একটি পুরনো ক্যারিবীয় রেস্টুরেন্ট “ম্যাংগ্রোভ”-এর স্মৃতিকে উৎসর্গীকৃত ছিল।
এছাড়াও, ফ্যাশন ব্র্যান্ড গুচ্চির সঙ্গে যুক্ত হয়ে তারা একটি কমিউনিটি গার্ডেন তৈরি করে, যেখানে ১০,০০০-এর বেশি ফার্ন ও গুল্ম রোপণ করা হয়।
তাজশানের মতে, “তরুণ প্রজন্মের আগ্রহের বিষয়গুলোর সঙ্গে আমাদের সংযোগ স্থাপন করতে হবে। যদি নাইকি কোনো প্রচার অভিযান চালায়, আর প্রথম একশ জনকে ফুটবল বুট দেওয়া হয়, তবে আমি সবার আগে সেখানে যাব। প্রকৃতি, ফুল, বাগান এবং খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও একই ধরনের অনুভূতি তৈরি করতে হবে।”
তাজশানের মতে, গাছপালা নিয়ে কাজ করার মধ্যে গভীর তাৎপর্য রয়েছে। বাগানে কাজ করার সময় মানুষের ভেদাভেদ ও সীমাবদ্ধতা দূর হয়, যা একটি সুন্দর সমাজের জন্য অপরিহার্য।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক