চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ির (ইভি) বাজারে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে চলেছে BYD (বিল্ড ইউর ড্রিমস)। সম্প্রতি তারা এমন একটি অত্যাধুনিক চার্জিং প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে যা গাড়িকে কয়েক মিনিটের মধ্যেই সম্পূর্ণ চার্জ করতে সক্ষম।
এই ফ্ল্যাশ চার্জিং সিস্টেমের মাধ্যমে মাত্র ৫ থেকে ৮ মিনিটের মধ্যে একটি ইভি’র ব্যাটারি সম্পূর্ণ চার্জ করা যাবে, যা অনেকটা পেট্রোল বা ডিজেল গাড়ির তেল ভরার মতোই সময় নেবে।
এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটি ইভি ব্যবহারকারীদের দীর্ঘ সময় ধরে চার্জিংয়ের উদ্বেগকে দূর করবে। সাধারণত, একটি বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে বেশ কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে, যা অনেক ব্যবহারকারীর জন্য একটি বড় সমস্যা ছিল।
নতুন এই প্রযুক্তির ফলে ব্যবহারকারীরা দ্রুত চার্জিংয়ের সুবিধা পাবেন এবং ইভি’র ব্যবহার আরো সহজ হবে। BYD পরিকল্পনা করছে খুব শীঘ্রই চীনজুড়ে ৪,০০০ এর বেশি নতুন চার্জিং স্টেশন তৈরি করার।
BYD চীনের বৃহত্তম ইভি প্রস্তুতকারক। তারা ব্যাটারি তৈরি করা শুরু করেছিল এবং এখন তারা তাদের ব্যাটারি এবং শক্তি সঞ্চয় প্রযুক্তির উন্নতি করে চলেছে।
BYD-এর তৈরি ১ মেগাওয়াট ফ্ল্যাশ চার্জারগুলো মাত্র ৫ মিনিটে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার (২৫০ মাইল) পর্যন্ত বিদ্যুত সরবরাহ করতে পারে। BYD-এর প্রতিষ্ঠাতা ওয়াং চুয়ানফু এক বিবৃতিতে বলেছেন, “ব্যবহারকারীদের চার্জিংয়ের উদ্বেগ সম্পূর্ণরূপে দূর করতে, আমাদের লক্ষ্য হল ইভিগুলির চার্জিংয়ের সময় জ্বালানি গাড়ির রিফুয়েলিংয়ের সময়ের মতোই সংক্ষিপ্ত করা।”
BYD তাদের ফ্ল্যাশ-চার্জিং সিস্টেমে নিজস্ব উদ্ভাবিত সিলিকন কার্বাইড পাওয়ার চিপ ব্যবহার করে, যার ভোল্টেজ ১,৫০০ ভোল্ট পর্যন্ত। তাদের তৈরি ‘ব্লেড’ লিথিয়াম-আয়ন ফসফেট ব্যাটারি সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ এবং কার্যকরী ইভি ব্যাটারি।
এমনকি টেসলাও তাদের কিছু ইভি’তে এই ব্যাটারি ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত বছর BYD প্রায় ৪.৩ মিলিয়নের বেশি নতুন শক্তির যান তৈরি করেছে, যেখানে ব্যাটারিচালিত গাড়ির সংখ্যা ছিল ১.৮ মিলিয়ন এবং প্লাগ-ইন হাইব্রিড ছিল ২.৫ মিলিয়ন।
চীনের শেঞ্জেন বাজারে তাদের শেয়ারের দাম গত ছয় মাসে প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। BYD-এর তৈরি সবচেয়ে আধুনিক মডেলগুলোর দাম প্রায় ৪০,০০০ ডলার পর্যন্ত হতে পারে, তবে তারা তুলনামূলকভাবে কম দামের ইভিও তৈরি করে, যেমন সিগাল, যার দাম চীনে প্রায় ১২,০০০ ডলার।
ইভি বাজারে BYD-এর এই সাফল্যের কারণে টেসলার মতো কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দামে প্রভাব পড়েছে।
তবে, BYD-এর কিছু দুর্বলতাও রয়েছে। জেডি পাওয়ারের একটি সমীক্ষায় BYD সিল এবং BYD সং প্লাস ব্যাটারিচালিত গাড়িগুলোকে তাদের মানের দিক থেকে পিছিয়ে থাকতে দেখা গেছে।
যদিও বাংলাদেশে এখনো ইভি’র বাজার তেমন প্রসারিত হয়নি, তবে BYD-এর এই অত্যাধুনিক চার্জিং প্রযুক্তি ভবিষ্যতে আমাদের দেশের পরিবহন ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে।
দ্রুত চার্জিং সুবিধা পাওয়া গেলে, এখানকার গ্রাহকদের মধ্যে ইভি’র চাহিদা বাড়বে এবং পরিবেশবান্ধব যানবাহনের ব্যবহারও বাড়বে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।