ইউক্রেনের জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে আসন্ন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিনের আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। এই আলোচনার মাধ্যমে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি টানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তবে এই পারমাণবিক কেন্দ্রটির নিরাপত্তা নিয়ে ইতোমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের পরমাণু বিষয়ক সংস্থা। ২০২২ সালের মার্চ মাস থেকে রুশ বাহিনী এই কেন্দ্রটি দখল করে রেখেছে।
ইউরোপের বৃহত্তম এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বর্তমানে যুদ্ধক্ষেত্রের একেবারে কাছে অবস্থিত। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) বারবার সতর্ক করে বলেছে, কেন্দ্রটির নিরাপত্তা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
সম্প্রতি, হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে যে আলোচনা হওয়ার কথা, তাতে জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি সোমবার এক বিবৃতিতে জানান, এই কেন্দ্রটি রাশিয়া ও ইউক্রেনের সীমান্তের কাছে অবস্থিত। যদিও বাস্তবিকভাবে, জাপোরিঝঝিয়া শহরের এনারহোদার-এ অবস্থিত এই কেন্দ্রটি ইউক্রেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমান্ত থেকে প্রায় ২০০ মাইলেরও বেশি দূরে।
যুদ্ধ শুরুর আগে, জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইউক্রেনের মোট বিদ্যুতের প্রায় ২০ শতাংশ সরবরাহ করত। এর ছয়টি রিঅ্যাক্টর ছিল।
কিন্তু বর্তমানে কেন্দ্রটি গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন এবং ড্রোন হামলা ও গোলাবর্ষণে এর কিছু ক্ষতি হয়েছে। আইএইএ-র তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এর সবগুলো রিঅ্যাক্টর বন্ধ রয়েছে।
কেন্দ্রের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে, কারণ এর আশেপাশে প্রায়ই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা এর আগে রাশিয়ার বিরুদ্ধে এই পারমাণবিক কেন্দ্র এবং এর আশেপাশের জনগণের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলার অভিযোগ করেছেন।
অন্যদিকে, রাশিয়াও ইউক্রেনের বিরুদ্ধে কেন্দ্রটিতে হামলার অভিযোগ এনেছে। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে আরও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে রাশিয়া সম্ভবত কেন্দ্রটিকে তাদের নিজস্ব বিদ্যুৎ গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করতে পারে।
গত শুক্রবার কিয়েভে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, এই কেন্দ্রটি “রুশদের জন্য একটি সমস্যা”। তিনি আরও বলেন, “ইউক্রেন ছাড়া এর কার্যক্রম চালানো সম্ভব নয়।
এটি পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদের অর্থ এবং বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন। এতে কয়েক বছর সময় লাগবে।” জেলেনস্কি আরও যোগ করেন, “আমি নিশ্চিত যে তারা (রাশিয়া) রাজনৈতিকভাবে এবং প্রকাশ্যে এমন বিবৃতি দেবে যে কেন্দ্রটি দ্রুত চালু হবে এবং তারা তাদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে।
তবে এটা দ্রুত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আর আইএইএ-এর ওপরও ক্রমাগত রাজনৈতিক চাপ থাকবে, কারণ তারা তাদের এই কাজ করতে দিতে পারে না।” রবিবার ট্রাম্প জানান, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার আসন্ন আলোচনায় “কিছু সম্পদ ভাগাভাগি” এবং “ভূমি ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র” নিয়ে আলোচনা হবে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, “রাশিয়া ও ইউক্রেনের সীমান্তে অবস্থিত একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে ইউক্রেনীয়দের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে এবং ট্রাম্প পুতিনের সঙ্গে আলোচনাতেও এটি উত্থাপন করবেন।” তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, তিনি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির কথা বলছেন।
লেভিট আরও বলেন, “আমি আলোচনার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে চাই না, তবে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছি এবং প্রেসিডেন্ট একটি শান্তি চুক্তি সম্পন্ন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলটি ২০২২ সালে রাশিয়ার অবৈধভাবে দখল করা চারটি অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম। রাশিয়া পূর্বে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়াকে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন