যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগে বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। রিপাবলিকান দলের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি পুনরায় নির্বাচিত হন, তাহলে তিনি এই পরিবর্তন আনতে পারেন।
বিভিন্ন বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসলে প্রায় ৩০০ জন বিচারক নিয়োগ দিতে পারেন, যা দেশটির বিচার বিভাগের চরিত্র বদলে দেবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের ফলে আদালতগুলোতে রক্ষণশীল বিচারকদের আধিপত্য বাড়বে। এর আগে, ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ২২৬ জন ফেডারেল বিচারক নিয়োগ করেছিলেন।
যদিও ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার চেয়ে সামান্য বেশি, অর্থাৎ ২২৮ জন বিচারক নিয়োগ দিয়েছেন, তবে ট্রাম্পের ৩০০ জনের বেশি বিচারক নিয়োগের সম্ভাবনা বিচার বিভাগের ভারসাম্যকে নতুন দিকে নিয়ে যেতে পারে।
এই সম্ভাব্য নিয়োগের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে বেশ কিছু বিচারকের পদ শূন্য রয়েছে।
এছাড়া, অনেক ফেডারেল বিচারক নির্দিষ্ট বয়স এবং সময়সীমা পার হওয়ার পর ‘সিনিয়র স্ট্যাটাস’-এর সুযোগ পান। এর মাধ্যমে তারা কর্মপরিধি কমিয়ে দিয়েও পুরো বেতন পান।
ফলে শূন্য হওয়া পদগুলোতে নতুন বিচারক নিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০২৮ সালের মধ্যে প্রায় ২৫০ জন বিচারক ‘সিনিয়র স্ট্যাটাস’-এর জন্য বিবেচিত হতে পারেন। এদের মধ্যে প্রভাবশালী সার্কিট কোর্টের ৬০ জনের বেশি বিচারকও রয়েছেন।
উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্ট বছরে হাতে গোনা কয়েকটি মামলার রায় দেয়, তাই সার্কিট কোর্টের বিচারকদের সিদ্ধান্ত অনেক ক্ষেত্রে চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ট্রাম্পের সম্ভাব্য বিচারক নিয়োগের ফলে এমন সব ব্যক্তির আগমন ঘটবে, যারা মেডিকেডের সুযোগ-সুবিধা হ্রাস, সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেসরকারিকরণ, পরিবেশ সুরক্ষার দুর্বলীকরণ, প্রবীণদের সুযোগ-সুবিধা বাতিল এবং প্রেসিডেন্টের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনে আগ্রহী হবেন।
উদাহরণস্বরূপ, ট্রাম্প ফ্লোরিডার বিচারক আইলিন ক্যাননের প্রশংসা করেছেন, যিনি তার বিরুদ্ধে গোপন নথি সংক্রান্ত একটি মামলায় ট্রাম্পের পক্ষে রায় দিয়েছিলেন। ট্রাম্প তাকে ‘চমৎকার’ এবং ‘আদর্শ বিচারক’ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন।
এদিকে, ডেমোক্রেটিক পার্টি এখনো ট্রাম্পের এই সম্ভাব্য পরিবর্তনের মোকাবিলায় সুসংহত কৌশল তৈরি করতে পারেনি বলে অনেকে মনে করছেন। সম্প্রতি এক জনমত জরিপে ডেমোক্রেটিক পার্টির জনপ্রিয়তা কমে গেছে।
বিষয়টি নজরে এনে বিভিন্ন মহল থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে। তারা মনে করেন, বিচার বিভাগে ট্রাম্পের এই ধরনের প্রভাব বিস্তারের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বিচার বিভাগকে রক্ষার জন্য সাহসী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান