যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি)-এর দুই ডেমোক্রেট সদস্যকে বরখাস্ত করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে তিনি সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর ওপর নিজের ক্ষমতা আরও বাড়াতে চাইছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
বরখাস্ত হওয়া দুই সদস্য হলেন আলভারো বেডোয়া এবং রেবেকা কেলি স্লাটার। তারা এই বরখাস্তকরণকে অবৈধ বলে দাবি করেছেন এবং এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এফটিসি হলো একটি স্বাধীন সংস্থা, যা ভোক্তা অধিকার রক্ষা ও একচেটিয়া কারবার (antitrust) বিরোধী আইন প্রয়োগের জন্য কাজ করে। সাধারণত, এই কমিশনে পাঁচজন সদস্য থাকেন, যাদের মধ্যে তিনজন প্রেসিডেন্ট যে দলের, সেই দলের এবং দুইজন বিরোধী দলের হয়ে থাকেন।
এই কমিশনারদের প্রেসিডেন্ট নিয়োগ করেন এবং সিনেট তা অনুমোদন করে। তাদের সাত বছরের মেয়াদ থাকে, যা এমনভাবে সাজানো হয়, যাতে একসঙ্গে সবাই অবসর না নেন।
আলভারো বেডোয়াকে ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিয়োগ দেন এবং ২০২২ সালের মে মাসে তার অনুমোদন হয়। তিনি এই বরখাস্তের তীব্র নিন্দা করে বলেন, “প্রেসিডেন্ট আমাকে অবৈধভাবে বরখাস্ত করেছেন।”
তিনি আরও যোগ করেন, “এটা সরাসরি দুর্নীতি। এফটিসি ১১১ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল জালিয়াত ও একচেটিয়া কারবারিদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য। কিন্তু এখন প্রেসিডেন্ট চাচ্ছেন এফটিসি যেন তার বন্ধুদের হাতের পুতুল হয়।”
অন্যদিকে, রেবেকা কেলি স্লাটারকে ২০১৮ সালে প্রথম ট্রাম্পের আমলে এফটিসি-তে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং তিনি ২০২১ সালে ভারপ্রাপ্ত চেয়ার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাইডেন তাকে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য পুনরায় মনোনয়ন দেন। স্লাটার বলেছেন, “আইন কমিশনের স্বাধীনতা রক্ষা করে, কারণ আইন কর্পোরেট ক্ষমতার পরিবর্তে আমেরিকান জনগণের সেবা করে।”
যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের পুরনো কিছু রায়ের কথা উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো কারণ ছাড়া স্বাধীন সংস্থার প্রধানদের বরখাস্ত করা যায় না। তা না হলে সংস্থাগুলো রাজনৈতিক প্রভাবে চলে আসবে এবং তাদের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হবে।
যদিও পরবর্তীকালে, ২০২০ সালের একটি রায়ে এই বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করা হয়, তবে এর মূল সুর এখনো বহাল আছে।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে ফেডারেল রিজার্ভসহ অন্যান্য স্বাধীন সংস্থাগুলোর ওপর প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কতটুকু, সেই সংক্রান্ত বিতর্ক আরও বাড়বে। ফেডারেল রিজার্ভ এমন একটি সংস্থা, যা দীর্ঘদিন ধরে তার স্বাধীনতা রক্ষার চেষ্টা করে আসছে।
অর্থনীতিবিদ ও বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতা বজায় রাখা দরকার, কারণ রাজনৈতিক প্রভাব থাকলে তারা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা বোধ করতে পারে।
এছাড়াও, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের আগে, বাইডেন প্রশাসনের অধীনে এফটিসি-র প্রকাশিত বেশ কিছু ব্লগ পোস্টও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে বিভিন্ন প্রযুক্তি জায়ান্ট ও ওষুধ কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের বিষয়ে তথ্য ছিল।
এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করে যে ট্রাম্প প্রশাসন নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর ওপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে, যা ভোক্তা অধিকার এবং বাজারের স্বচ্ছতার জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস