যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক (ফেড) দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কারণে সৃষ্ট অনিশ্চয়তার কারণে এমনটা করা হয়েছে। একইসঙ্গে, মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
ফেডারেল রিজার্ভের সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ১.৭ শতাংশ হারে বাড়তে পারে, যা আগে ২.১ শতাংশ ধরা হয়েছিল। এছাড়া, ২০২৬ ও ২০২৭ সালের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও কমিয়ে ১.৮ শতাংশ করা হয়েছে। ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের কারণে এই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ফেডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এ বছর মূল্যস্ফীতি ২.৭ শতাংশে পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করছেন, যা আগে ২.৫ শতাংশ ধরা হয়েছিল। সাধারণত, কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশের মধ্যে রাখতে চায়। যদিও কয়েক বছর আগে মূল্যস্ফীতি ৯.১ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল, যা ছিল এক প্রজন্মের মধ্যে সর্বোচ্চ।
ফেডারেল রিজার্ভের নীতি নির্ধারকেরা সুদের হার অপরিবর্তিত রেখেছেন, যা বর্তমানে ৪.২৫ থেকে ৪.৫ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। তবে, তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, এই বছর সুদের হার কমানো হতে পারে। অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ব্যাংক অব ইংল্যান্ডও তাদের সুদের হার ৪.৫ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি মূল্যবৃদ্ধির হার কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে হোয়াইট হাউসে ফিরেছেন, তার বাণিজ্য শুল্ক নীতি বিশ্বজুড়ে ব্যবসা এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। অনেক অর্থনীতিবিদ আশঙ্কা করছেন, যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ালে জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়তে পারে। যদিও ট্রাম্পের দাবি, এই ধরনের পদক্ষেপ আমেরিকার জন্য বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিস্থিতিতে সুবিধা তৈরি করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বাড়াতে সহায়ক হবে।
ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “বিভিন্ন জরিপে দেখা যাচ্ছে, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ব্যবসা এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে অনিশ্চয়তা বেড়েছে। এর ভবিষ্যৎ ব্যয় ও বিনিয়োগের ওপর কেমন প্রভাব পড়বে, তা এখনো দেখার বিষয়।”
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির এই পরিবর্তন বিশ্ব অর্থনীতির ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাদেশের অর্থনীতিও এর ব্যতিক্রম নয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি যুক্তরাষ্ট্র কোনো পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ায়, তবে সেই পণ্যটি বাংলাদেশে আমদানি করতে বেশি খরচ হতে পারে, যা ভোক্তার ওপর প্রভাব ফেলবে।
ফেডের এই সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে সামান্য উন্নতি দেখা গেছে। নিউইয়র্কের শেয়ার বাজারে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ০.৮ শতাংশ এবং প্রযুক্তি-নির্ভর নাসডাক কম্পোজিট সূচক ১.২ শতাংশ বেড়েছে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান