গিনেথ প্যালট্রো এবং টিমোথি শ্যালামের নতুন সিনেমায় অন্তরঙ্গ দৃশ্যের শুটিংয়ের সময় ‘ইনটিমেসি কোঅর্ডিনেটর’-এর উপস্থিতি নিয়ে নিজের অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন অভিনেত্রী গিনেথ প্যালট্রো। হলিউডে বর্তমানে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সুরক্ষার জন্য অন্তরঙ্গ দৃশ্যের শুটিংয়ের সময় ‘ইনটিমেসি কোঅর্ডিনেটর’ নিয়োগ করার চল শুরু হয়েছে।
তবে এই বিষয়টিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেননি প্যালট্রো। প্যালট্রো সম্প্রতি ভ্যানিটি ফেয়ারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, সিনেমায় অন্তরঙ্গ দৃশ্যের সময় একজন ‘ইনটিমেসি কোঅর্ডিনেটর’-এর উপস্থিতি তাঁর ভালো লাগেনি।
তাঁর মতে, একজন শিল্পী হিসেবে এই ধরনের নিয়ন্ত্রন তাঁকে “দমবন্ধ” করে তোলে। ‘মার্টি সুপ্রিম’ সিনেমাটি তাঁর অভিনয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কারণ, ২০১০ সালের পর এই প্রথম তিনি কোনো সিনেমায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করছেন।
ইনটিমেসি কোঅর্ডিনেটর-এর ধারণাটি সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্যালট্রো বলেন, “এখন ‘ইনটিমেসি কোঅর্ডিনেটর’ নামে একটা বিষয় এসেছে, যা আগে আমার জানা ছিল না।” তিনি আরও যোগ করেন, সিনেমার একটি দৃশ্যে অন্তরঙ্গ মুহূর্তে অভিনয়ের সময় যখন তাঁকে একটি নির্দিষ্ট ভঙ্গি করতে বলা হয়েছিল, তখন তিনি এর বিরোধিতা করেন।
তাঁর মতে, তিনি এমন একটি সময় থেকে এসেছেন যখন অভিনেতা-অভিনেত্রীরা পোশাক খুলে ক্যামেরার সামনে অভিনয় করতেন। প্যালট্রোর মতে, তাঁর সহ-অভিনেতা টিমোথি শ্যালামও তাঁর সঙ্গে একমত ছিলেন।
সিনেমার শুটিংয়ের সময় তাঁরা দুজনেই নাকি ইনটিমেসি কোঅর্ডিনেটরকে কিছুটা দূরে থাকতে বলেছিলেন। যদিও সিনেমায় অন্তরঙ্গ দৃশ্যের ক্ষেত্রে ইনটিমেসি কোঅর্ডিনেটরের ধারণাটি নতুন, তবে এর প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে #MeToo আন্দোলনের পর।
এই আন্দোলনের মাধ্যমে অভিনয় জগতে যৌন হেনস্তার বিভিন্ন অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে, যার ফলে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তবে, অনেক তারকাই ইনটিমেসি কোঅর্ডিনেটরের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন।
অনেকে মনে করেন, এর কারণে দৃশ্যের স্বাভাবিকতা নষ্ট হয়। উদাহরণস্বরূপ, অভিনেতা শন বিন এই প্রসঙ্গে তাঁর আপত্তির কথা জানিয়েছেন। জেনিফার অ্যানিস্টনও তাঁর সিনেমার একটি দৃশ্যের জন্য নিযুক্ত ইনটিমেসি কোঅর্ডিনেটরকে সরিয়ে দিতে বলেছিলেন।
তাঁর মতে, অভিজ্ঞ অভিনেতাদের নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া ভালো থাকে, তাই আলাদা করে কারো সাহায্যের প্রয়োজন হয় না। অন্যদিকে, এমা থম্পসন, র্যাচেল জেগলার এবং সিডনি সুইনির মতো তারকারা ইনটিমেসি কোঅর্ডিনেটরের এই ধারণাকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তাঁদের মতে, এটি অভিনেতা-অভিনেত্রীদের জন্য একটি নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি করে। সিনেমায় প্যালট্রো ও শ্যালামের বয়সের ব্যবধান নিয়েও কথা বলেছেন তিনি। সিনেমায় শ্যালামের চরিত্রের সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যেখানে তাঁদের মধ্যে বেশ কিছু অন্তরঙ্গ দৃশ্য রয়েছে।
অন্যদিকে, এই সিনেমায় শ্যালাম একজন টেবিল টেনিস খেলোয়াড়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ছবিতে তাঁর চরিত্রের নাম মার্টি। ১৯৫৮ ও ১৯৬০ সালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পুরুষ একক চ্যাম্পিয়ন ছিলেন।
প্যালট্রো ছবিতে শ্যালামের প্রতিপক্ষের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যাঁর সঙ্গে শ্যালামের চরিত্রের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ইনটিমেসি কোঅর্ডিনেটরের ধারণাটি নিয়ে হলিউডে বিতর্ক চললেও, এর প্রয়োজনীয়তা এখন অনেক বাড়ছে।
বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা তাঁদের কাজের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা এবং স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়টি নিশ্চিত করতে এই ধরনের সহযোগিতার ওপর জোর দিচ্ছেন। তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান