ইংল্যান্ডের যুব দলের বিশ্বকাপ স্বপ্নের সারথি: লি কার্সলি
ফুটবল বিশ্বে, বিশেষ করে ইউরোপে, খেলোয়াড়দের ভবিষ্যতের জন্য যুব দলগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। এই মুহূর্তে, ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-২১ দলের দিকে তাকালে তেমনই একটি চিত্র চোখে পড়ে, যেখানে আগামী বিশ্বকাপের জন্য খেলোয়াড় তৈরির প্রক্রিয়া চলছে।
আর এই দলের প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন লি কার্সলি।
যদি পরিস্থিতি অন্যরকম হতো, তবে হয়তো এই মুহূর্তে ডাবলিনের কোনো এক মাঠে আয়ারল্যান্ড প্রজাতন্ত্রের হয়ে বুলগেরিয়ার বিরুদ্ধে নেশনস লিগের প্লে-অফে দলের দায়িত্বে থাকতেন লি কার্সলি। কিন্তু ২০২২ সালের শেষ দিকে, ডার্বি এবং এভারটনের প্রাক্তন এই মিডফিল্ডারকে আয়ারল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন তাদের যুব দলের কোচের পদ অফার করে।
যদিও সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে তিনি ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-২১ দলের সঙ্গেই থাকার সিদ্ধান্ত নেন।
কার্সলির এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে ইংল্যান্ডের জন্য লাভজনক হয়েছে। কারণ, ২০২৩ সালের ইউরোর পরে গ্যারেথ সাউথগেট যখন দলের দায়িত্ব ছাড়েন, তখন সিনিয়র দলের কোচের পদ শূন্য হয়।
সেই সময় থমাস টুখেলকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পরে কার্সলি পুনরায় তাঁর পুরনো দায়িত্বে ফিরে আসেন এবং যুব দলের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
বর্তমানে, কার্সলির প্রধান লক্ষ্য আসন্ন ইউরোপিয়ান অনূর্ধ্ব-২১ চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য দল প্রস্তুত করা। যদিও সম্প্রতি ফ্রান্সের অনূর্ধ্ব-২১ দলের সঙ্গে একটি উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে তাঁর দল ৫-৩ গোলে পরাজিত হয়েছে, তবে কার্সলি এই টুর্নামেন্টে ভালো ফল করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।
কারণ, এই দলের খেলোয়াড়েরা সিনিয়র দলে খেলার যোগ্যতা রাখে এবং তাঁদের বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনাও রয়েছে।
কার্সলি মনে করেন, খেলোয়াড়দের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত সিনিয়র দলে সুযোগ পাওয়া এবং বিশ্বকাপ জেতার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করা। তাঁর মতে, “আমাদের লক্ষ্য হলো সিনিয়র দলকে বিশ্বকাপ জিততে সহায়তা করা। এটাই সব খেলোয়াড়ের স্বপ্ন।
আমাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা রাখতে হবে। খেলোয়াড়েরা দেখছে সিনিয়র দল কতটা ভালো খেলছে এবং তারা কতটা দ্রুত উন্নতি করছে।
আগামী জুন মাসে স্লোভাকিয়ায় টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে, কার্সলির হাতে দল প্রস্তুত করার জন্য খুব বেশি সময় নেই। তিনি জানেন, দলের জন্য সঠিক কৌশল তৈরি করা এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে সমন্বয় আনাটা খুবই জরুরি।
ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ম্যাচে হিউগো একিটিকে, উইলসন ওডোবার্ট এবং রায়ান শের্কির আক্রমণভাগের সামনে ইংল্যান্ডের রক্ষণ দুর্বল হয়ে পড়েছিল।
অন্যদিকে, জ্যারাড ব্রান্থওয়েটের দেরিতে দলে যোগ দেওয়াটা কিছুটা সমস্যা তৈরি করেছিল। তিনি ফ্রান্সের বিরুদ্ধে দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামেন এবং পর্তুগালের বিরুদ্ধে ম্যাচে শুরুর একাদশে তাঁর খেলার সম্ভাবনা রয়েছে।
কার্সলি সাধারণত ৪-এর রক্ষণ নিয়ে খেলতে পছন্দ করেন, তবে প্রতিপক্ষের দুর্বলতা অনুযায়ী তিনি কৌশল পরিবর্তন করতে পারেন।
কার্সলি মনে করেন, “আমাদের আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে হবে, গোল করতে হবে এবং ম্যাচ জিততে হবে।” ফ্রান্সের বিরুদ্ধে অ্যালেক্স স্কট এবং জাডেন ফিলোজেনকে উইং-ব্যাক হিসেবে খেলানো তারই প্রমাণ।
মাঝমাঠের খেলোয়াড়দের নিয়ে কার্সলি বেশ আশাবাদী। কারণ, তাঁর দলে এই পজিশনে ভালো মানের খেলোয়াড়ের সংখ্যা বেশি।
আদাম ওয়ার্টন, যিনি গত বছর অস্ত্রোপচারের কারণে প্রায় চার মাস মাঠের বাইরে ছিলেন, তিনি আবারও দলে ফিরে এসেছেন। অভিজ্ঞতার কারণে তিনি সিনিয়র দলে জায়গা করে নিতে পারেন।
ওয়ার্টন মনে করেন, “আমি যখন মাঠে খেলি, তখন আমার সঙ্গে কে খেলছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমি আমার খেলাটা উপভোগ করি এবং ভালো খেলতে চেষ্টা করি।
অন্যদিকে, জেমস ম্যাকআটি এই দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে তিনিই প্রথম গোলটি করেন।
ম্যানচেস্টার সিটির ক্লাব বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের কারণে তাঁর এবং রিকো লুইস এর টুর্নামেন্টে খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তবে ম্যাকআটি জানিয়েছেন, তিনি পেপ গার্দিওলার সঙ্গে কথা বলে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
যুব দলের এই বিশ্বকাপ প্রস্তুতি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয়। কারণ, এখানে তরুণ খেলোয়াড়দের বিকাশের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে, যা ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী দল গঠনে সহায়তা করে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান