জীবনকে আরও উন্নত করার আকাঙ্ক্ষা মানুষের একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। নিজের ভালো থাকার জন্য, মানসিক শান্তির জন্য মানুষ বিভিন্ন ধরনের চেষ্টা করে থাকে।
বর্তমানে আত্ম-উন্নয়ন বা সেলফ-হেল্পের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। পশ্চিমা বিশ্বে এই ধারণার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে বিশাল এক ব্যবসা, যেখানে কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়।
তবে অতিরিক্ত আত্ম-উন্নয়নের পথে হাঁটা কি সবসময় সঠিক? সম্প্রতি এক লেখায় এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন লেখক ও সাংবাদিক হান্না ইউয়েন্স।
হান্না ইউয়েন্স তার লেখায় তুলে ধরেছেন অতিরিক্ত আত্ম-উন্নয়নের কুফল সম্পর্কে। তিনি জানান, একসময় তিনি আত্ম-উন্নয়নের প্রতি এতটাই আকৃষ্ট হয়েছিলেন যে, নিয়মিত বই পড়া, বিভিন্ন সেমিনারে অংশ নেওয়া এবং সামাজিক মাধ্যমে এইসব বিষয়ে সক্রিয় ছিলেন।
তিনি উপলব্ধি করেন, অতিরিক্ত সচেতনতা তাকে জীবনের আসল আনন্দ থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছিলো। অতিরিক্ত চেষ্টা সত্ত্বেও তিনি আগের চেয়ে আরও বেশি হতাশায় ভুগতে শুরু করেন।
আসলে, আত্ম-উন্নয়নের ধারণাটি সব সময় একরকম থাকে না। এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে গিয়ে হান্না উল্লেখ করেন, পশ্চিমা বিশ্বে ‘সফলতা’র একটি নির্দিষ্ট সংজ্ঞা রয়েছে।
এই সংজ্ঞা অনুযায়ী, নিজেকে ‘সফল’ প্রমাণ করতে হলে কিছু প্রচলিত পথে হাঁটতে হয়। ভালো চাকরি, সুন্দর সম্পর্ক এবং সামাজিক স্বীকৃতি—এইগুলো যেন সাফল্যের মাপকাঠি।
এই চাপ থেকে মুক্তি পেতে মানুষ যখন আত্ম-উন্নয়নের পথে হাঁটা শুরু করে, তখন সে নিজেকে ‘অসম্পূর্ণ’ ভাবতে শুরু করে।
হান্না ইউয়েন্স আরও উল্লেখ করেন, আত্ম-উন্নয়নের নামে বর্তমানে যে বিশাল ব্যবসা চলছে, তা অনেক সময় মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নেয়। যারা জীবনের বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত, তাদের কাছে এই ব্যবসার মাধ্যমে বিভিন্ন ‘সমাধান’ বিক্রির চেষ্টা করা হয়।
তবে আত্ম-উন্নয়ন একটি জটিল প্রক্রিয়া, যা কোনো নির্দিষ্ট সূত্র বা পদ্ধতির মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব নয়। মনোবিজ্ঞানী এবং আধ্যাত্মিক গুরুরা প্রায়ই বলে থাকেন, আত্ম-উন্নয়ন একটি আজীবনের যাত্রা। তাহলে প্রশ্ন হলো, এই যাত্রা কখন শেষ হবে?
বিষয়টি আরও ভালোভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য হান্না ইয়ুয়েন্স, জ্যামি ক্লিমেন্টস নামের একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেছেন। জ্যামি একসময় আত্ম-উন্নয়নকে তার পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।
কিন্তু পরে তিনি বুঝতে পারেন, অতিরিক্ত আত্ম-উন্নয়ন তার জীবনকে আরও কঠিন করে তুলেছে। এমনকি তার ক্লায়েন্টদের মধ্যেও তিনি একই সমস্যা লক্ষ্য করেন।
ক্লিমেন্টস মনে করেন, আত্ম-অনুসন্ধান, নিজের ভেতরের দুর্বলতাগুলো খুঁজে বের করা—এগুলো আত্ম-উন্নয়নের প্রাথমিক ধাপ। কিন্তু এর পরের ধাপে, অর্জিত জ্ঞানকে জীবনের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়াটা খুব জরুরি।
অর্থাৎ, জীবনের প্রতিদিনের সমস্যাগুলোর সমাধানে এই জ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে।
হান্না ইউয়েন্স আরও উল্লেখ করেন, প্রুন হ্যারিস এবং অ্যালি ওয়াইজ নামের দুজন অভিজ্ঞ ব্যক্তির সঙ্গে তার আলোচনার কথা। তারা দুজনেই আত্ম-উন্নয়নকে একটি সরল পথে না দেখে, একটি চক্রাকার পথে এগিয়ে যাওয়ার ধারণা দিয়েছেন।
তাদের মতে, মানুষ একই সমস্যার সম্মুখীন হয় বারবার, তবে প্রতিবারই সে সমস্যা সম্পর্কে নতুন কিছু জানতে পারে।
সবশেষে, হান্না ইউয়েন্স এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, অতিরিক্ত আত্ম-উন্নয়নের পরিবর্তে জীবনের স্বাভাবিক গতিকে অনুসরণ করা উচিত। নিজের শরীরের কথা শোনা এবং বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করাই হলো আসল কথা।
তথ্য সূত্র: The Guardian