যুক্তরাজ্যের শ্রম দল, যারা বর্তমান সরকারের প্রধান বিরোধী দল, তারা মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর উপর আরোপিত একটি গুরুত্বপূর্ণ কর কমানোর কথা বিবেচনা করছে। এমনটাই জানা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম থেকে।
এই পদক্ষেপের কারণে দেশটির অভ্যন্তরে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, কারণ একই সময়ে সরকার প্রতিবন্ধী ভাতা এবং সরকারি চাকরি কমানোর পরিকল্পনা করছে। সমালোচকেরা বলছেন, এটি যেন দুর্বল মানুষের অধিকার খর্ব করে মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার শামিল।
জানা গেছে, লেবার পার্টির নেতা কেইর স্টারমার ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করতে চাইছেন, যিনি হয়তো ভবিষ্যতে আবার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে পারেন।
যুক্তরাজ্যের শ্যাডো চ্যান্সেলর র্যাচেল রিভস নিশ্চিত করেছেন যে, মেটা (Meta) এবং অ্যামাজনের মতো মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর উপর আরোপিত বার্ষিক ১ বিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ১৩০ বিলিয়ন টাকা) মূল্যের ডিজিটাল পরিষেবা কর নিয়ে আলোচনা চলছে।
রিভস মনে করেন, এই করের পরিবর্তন হলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ব্রিটিশ স্টিলের উপর আরোপিত ২৫ শতাংশ শুল্ক তুলে নেওয়া যেতে পারে। তবে, তিনি ডিজিটাল পরিষেবা করের পরিবর্তন হতে পারে এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি, যেটির বিরুদ্ধে আমেরিকা দীর্ঘদিন ধরে আপত্তি জানিয়ে আসছে।
এদিকে, বিরোধী দল লিবারেল ডেমোক্র্যাটস সতর্ক করে বলেছে, লেবার পার্টি সম্ভবত নৈতিক দিক থেকে বিচ্যুত হচ্ছে এবং এটি হবে প্রতিবন্ধীদের অধিকার কেড়ে নিয়ে এলন মাস্ক ও ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সুবিধা দেওয়া।
লেবার পার্টির অনেক সংসদ সদস্য সামাজিক নিরাপত্তা খাতে প্রায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ৬৫০ বিলিয়ন টাকা) কাটার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন। ট্রেড ইউনিয়নগুলোও আশঙ্কা করছে, সরকারের ২ বিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ২৬০ বিলিয়ন টাকা) ব্যয়ের প্রস্তাবের ফলে প্রায় ১০,০০০ সরকারি কর্মচারীর চাকরি যেতে পারে।
শুধু তাই নয়, সরকারি সাহায্যপুষ্ট বিভিন্ন সংস্থাতেও কর্মী ছাঁটাই হতে পারে।
লেবার পার্টির এমপি এবং প্রাক্তন শ্যাডো মন্ত্রী র্যাচেল মাস্কেল বলেন, “যদি ডিজিটাল পরিষেবা করের বিষয়ে ছাড় দেওয়ার কথা বিবেচনা করা হয়, তাহলে আমি উদ্বিগ্ন হব।
কারণ একই সময়ে সরকার দুর্বল মানুষের জীবনযাত্রার মান কমাচ্ছে। আমি বুঝি, চ্যান্সেলরকে দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠন করতে হবে, কিন্তু এর জন্য কাদের ত্যাগ স্বীকার করতে হবে, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সমাজের সবচেয়ে দরিদ্র মানুষগুলোকে যেন এর শিকার হতে না হয়।”
অন্যদিকে, লিবারেল ডেমোক্র্যাট দলের নেতা এড ডেভি বলেছেন, “আলোচনা চলছে এমন একটি সময়ে যখন লেবার দল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কোম্পানিগুলোর উপর থেকে কর তুলে দেওয়ার কথা ভাবছে, তখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আপস করা কোনো কাজের কথা নয়। আপনারা দেখছেন, তিনি (ট্রাম্প) এরই মধ্যে ব্রিটিশ স্টিলের উপর শুল্ক আরোপ করেছেন।
ডেভি মনে করেন, যুক্তরাজ্যের উচিত হবে ২ এপ্রিল থেকে ট্রাম্পের সম্ভাব্য স্টিল শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় টেসলা গাড়ির উপর শুল্ক আরোপ করা, যার একটি অংশের মালিক এলন মাস্ক।
কেইর স্টারমারের ট্রাম্পের প্রতি এমন নমনীয় আচরণ নিয়ে ডেভি বলেন, “মনে হচ্ছে তিনি (স্টারমার) বলছেন, আসুন আমরা তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করি, যাতে তিনি আমাদের ক্ষতি না করেন।
নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্টারমার ব্যক্তিগতভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে “পছন্দ করেন এবং সম্মান করেন” বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি আরও বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য আছে যে ইউরোপীয় দেশগুলোর উচিত সম্মিলিতভাবে নিজেদের সুরক্ষার জন্য আরও বেশি দায়িত্ব নেওয়া।
যুক্তরাজ্য সরকার সম্ভবত প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে, যার জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্য কমানো হতে পারে।
শ্যাডো চ্যান্সেলর রিভস বলেছেন, তার অর্থনৈতিক পরিকল্পনা এবং প্রত্যাশার চেয়ে কম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণ হলো “বিশ্বের পরিবর্তন”।
এদিকে, ট্রাম্পের বিশেষ দূত বলেছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির জন্য স্টারমারের “willing coalition” গঠন করার পরিকল্পনা নিছক “ভঙ্গিমা”।
যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সৌদি আরবে কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা চলছে এবং ধারণা করা হচ্ছে আসন্ন মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে একটি সমঝোতা হতে পারে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান